সাক্ষাৎকার : রুহুল আমীন সজীব

রুহুল আমিন সজীব – শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এসিস্টেন্ট প্রফেসর। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছেন। সাস্টে শিক্ষক থাকাকালীন কিছু আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব প্রজেক্ট সে হাতে নিয়েছে এবং সাফল্য লাভ করেছে। সজীব আমার ভার্সিটির এক ব্যাচ জুনিয়র। গুগল টকে নক করলাম, ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়ে গেলো। আশা করি তাঁর চিন্তা, কথা ও কাজ থেকে আমাদের তরুণরা অনুপ্রাণিত হবে।

সজীব (বামে)
সজীবের (ছবির দিকে তাকালে বামে) সাথে আমি, পিপীলিকা টিমের একটি অনুষ্ঠানে।

সুবিন : সজীব, কী খবর?
সজীব : এই তো সুবিন ভাই। খবর সব কিছু মিলিয়ে ভালই। আপনি কেমন আছেন?

সুবিন : আমি ভালো আছি। তুমি এখন কোথায় পড়াশোনা করছ? (যদিও আমি জানি, পাঠকরা তো জানে না।)
সজীব : আমি এখন স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি তে পিএইচডি করছি। আমার পিএইচডি এর প্রথম দিকে আমি বায়োইনফরমেটিক্স নিয়ে কাজ করছি।

সুবিন : শুনলাম এক বিখ্যাত প্রফেসরের সাথে কাজ করছ?
সজীব : আমি কাজ করছি স্টিভেন স্কিইনা এর সাথে। উনি এলগরিদম আর ডাটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করেন।

সুবিন : স্কিইনা তো আমাদের পরিচিত। মানে তাঁর Algorithm Design Manual বইটি আমরা অনেকেই পড়েছি। তিনি লোক কেমন?
সজীব : স্কিইনা খুবি মজার লোক। উনি এখানে এলগরিদম এর সেমিনার পরিচালনা করেন। স্টোনি ব্রুক সিএস এর এসিএম এর গ্রুপগুলি দেখাশোনা করেন।

সুবিন : স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলে কিভাবে? আমাদের যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, তারা নিজেদের কিভাবে প্রস্তুত করবে?
সজীব : প্রথমত, বাইরে পড়াশোনা করার জন্য সব থেকে যেটা বেশী দরকার তা হল তা হল গবেষণা করার আগ্রহ, অথবা খুব ভালো অর্গানাইজেশনে কাজ করার আগ্রহ; যেমন সিলিকন ভ্যালির কোন কোম্পানি। দ্বিতীয়ত, আন্ডারগ্রেডে একটু ভালো করে প্রোগ্রামিং এবং ম্যাথ করাটা জরুরী। খুব ভালো গবেষনা অনেক সময় আমাদের দেশে হয় না তাই আমি এর উপর জোর দিব না। তবে সুযোগ মত প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট বা সফটওয়্যার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার উপর জোর দিতে বলব। আমি এই কথা গুলি বলছি মূলত মাঝারি মানের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য। খুব ভালো যারা তারা এমনিতেই ভালো রিসার্চ করে এবং তাদের পাব্লিকেশন থাকে। তৃতীয়ত, আমি বলব, জিআরই এবং টোফেলে ভালো স্কোর করার জন্য। অনেকেই আলসেমি করে অথবা সময়ের অভাবে এই দুইটি পরীক্ষা দিতে পারেনা। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কালচার নেই বলে তারা আমেরিকায় না গিয়ে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা ইউরোপে যায়। আমেরিকার জন্য এই দুইটি পরীক্ষা ম্যান্ডেটরি। তাই আলসেমিটা ঝেড়ে ফেলে আন্ডারগ্রেডের শেষ বছর বা আন্ডারগ্রেড শেষ করে এর দুইটি পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশান নেওয়া উচিৎ। আমার আমেরিকায় পড়তে আসার জন্য এক বছর আগে থেকে প্ল্যান করতে হয়েছে।

সুবিন : তুমি কোন ভার্সটিগুলাতে অ্যপ্লাই করেছিলে?
সজীব : আমি প্রায় ৮ টি টপ স্কুলে এপ্লাই করেছি। মাঝারি মানের ৪ টি তে এপ্লাই করেছি। অফার পেয়েছি কার্নেগি ম্যালন (মাষ্টার্স ফলোড বাই পিএইচডি), স্টোনি ব্রুক (পিএইচডি উইথ ফেলোশীপ), ইউএমবিসি বাল্টিমোর (পিএইচডি) তে।

সুবিন : স্টোনি ব্রুকে কেন ভর্তি হলে?
সজীব : আমি যেখানেই এপ্লাই করেছি, সেখানে আমার রিলেটেড কাজ হয় কিনা সেই ব্যাপারটিতে প্রাধান্য দিয়েছি। স্টোনি ব্রুক এর সিএস অনেক বড় ডিপার্টমেন্ট। এখানে কমবেশী প্রায় সব কিছু নিয়েই কাজ হয়। আমার আগ্রহ ছিল এনএলপি (NLP), আইআর (IR) বা এলগরিদম নিয়ে।  স্টোনি ব্রুকে আমার পছন্দের কয়েকজন প্রফেসর ও আছেন। স্টিভেন স্কিইনা তাদের মধ্যে অন্যতম। আমি মূলত স্টিভের ডাটা সায়েন্স ল্যাবের কথা মাথায় রেখে এপ্লাই করি। পাশাপাশি আমার আগ্রহের সাথে রিলেটেড আরো কয়েকটা ল্যাবের কথাও আমি আমার স্টেটমেন্ট অব পারপাসে উল্লেখ করি। যাই হোক, প্রথমত আমাকে এক্সেপ্ট করেন প্রফেসর মাইকেল কিফার। উনি নলেজ রিপ্রেজেন্টেশান নিয়ে কাজ করেন।

সুবিন : স্টেটমেন্ট অব পারপাস যাকে সংক্ষেপে SOP বলে, সেটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এটি লেখার ব্যাপার কোনো টিপস্ ?
সজীব : পিএইচডিতে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লিকেশনের জন্য SOP এর উপর অন্তত ৫০% গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তাই SOP অবশ্যই খুব ভালো করে লিখতে হবে। আমি SOP নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছি। অনেকের অভিজ্ঞতা জেনেছি। তারপরে নিজের SOP লিখেছি।
এতে মূলত নিচের ব্যাপার গুলি থাকে :
১। আমি কি করতে চাই
২। আমার আগ্রহের কাজ করার জন্য আমি আন্ডারগ্রেডে কি পড়েছি, বা করেছি, আমার কোন অভিজ্ঞতা
৩। এই কাজ নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
৪। এবং আমার এই গবেষনা করার জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করছি তার কি প্রয়োজন
এই সব নিয়েই সাধারণত একটি SOP লেখা হয়। এক কথায়, SOP তে নিজেকে কেউ আইন্সটাইন প্রমাণ করার থেকে নিজের যে পজটিভ দিকগুলো এবং অভিজ্ঞতা আছে এবং সেগুলো কিভাবে একজনের আগ্রহের বিষয়বস্তুতে গবেষণা করতে সাহায্য করতে পারবে তাই তুলে ধরতে হয়।

সুবিন : তুমি যেহেতু বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছ, নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন ছাত্রছাত্রীরা তোমাকে কর, ‘স্যার, প্রোগ্রামিং করতে গিয়ে লেখাপড়া করার সময় পাই না, তাই ভালো রেজাল্ট করতে পারি না’। কিংবা ‘স্যার, প্রোগ্রামিং করলে আমার লেখাপড়ার ক্ষতি হয়, তাই প্রোগ্রামিং করি না।’ এদেরকে তুমি কী উত্তর দাও?
সজীব : আমি কখনোই মনে করিনা যে প্রোগ্রামিং একজনের পড়ালেখায় সময় নষ্ট করে। প্রোগ্রামিং করার সময়ে একজন মাথা খাটিয়ে, কাগজে আঁকিবুকি করে, বা একটি এলগরিদম ডিজাইন করার সময়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তা যেকোন ধরনের বুকিস পড়ালেখার থেকে ভালো। সিএস (CS : Computer Science)-এ যেকোন ধরনের পড়ালেখার ৭০% কাজ হল প্রব্লেম সল্ভিং রিলেটেড। আর আমরা প্রব্লেম সল্ভ করি প্রোগ্রামিং করে। অতএব, আমি মনে করি প্রোগ্রামিং না জানলে সিএস এর বেশীরভাগ কাজ করা অনেক দূরহ হয়ে পরে।

সুবিন : তুমি তো এসিএম আইসিপিসি ও অন্যান্য Competitive প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতে। সেগুলোর গুরুত্ব কেমন? তোমার কর্মজীবনেই বা সেগুলোর প্রভাব কেমন?
সজীব : আমাদের বাংলাদেশে বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রী সঠিক উপায়ে শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু সিএস এর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এসিএম আইসিপিসি সেই বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখানে যে কোন ছাত্র-ছাত্রী নিজে থেকে পড়ালেখা করে, কনসাল্ট করে, প্রবলেম সল্ভ করে বিশ্বমানের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। তাই এসিএম ও অন্যান্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আমাদের জন্য সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই যে আমাদের দেশের সব ছাত্র-ছাত্রী যেন এসিএম এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রবলেম সল্ভিং করে। দেশের বাইরের যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেকোন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান এসিএম প্রব্লেম সল্ভিং অভিজ্ঞতা বা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ফলাফলের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

সুবিন : যদিও মেয়েদের বয়স আর ছেলেদের সিজিপিএ জিজ্ঞাসা করতে হয় না, তবুও, তোমার সিজিপিএ কত ছিল? এটি হয়ত পাঠকদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।
সজীব : হা হা। আমার সিজিপিএ ৩.৯৬। এতে করে কেউ যেন আবার ভেবে না বসে যে এই জন্যই আমি উপরের অনেক বড় বড় কথা বলেছি। আমি যা বলেছি তা আমার নিজের এবং আশেপাশের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের অভিজ্ঞতার থেকেই বলেছি।

সুবিন : আমি জিজ্ঞাসা করলাম এই কারণে যে তুমি তো প্রোগ্রামিংয়ের প্রচুর সময় দিতে, আবার ক্যাম্পাসের নানান কাজে (আসলে অকাজে) উপস্থিত থাকতে। তোমার স্কুল-কলেজ কোনগুলো ছিল?
সজীব : আমার স্কুল ছিল মতিঝিল গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল, ঢাকা। কলেজ ছিল নটর ডেম কলেজ, ঢাকা।

সুবিন : সিএসই পড়লে কেন?
সজীব : আমি মোটেও সুপার ডুপার ছাত্র ছিলাম না। প্রথম দিকে সিএস নিয়ে তেমন কোন ফেসিনেশন ও ছিলনা। তবে সমসাময়িক অনেক কিছু নিয়ে পড়াশোনা করার সময় দেখেছি সিএস এর প্রোগ্রামিং ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। কিন্তু সত্য কথা হল, কলেজে থাকতে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার সময় আমি প্রোগ্রামিং প্রায় কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু কম্পিউটারের বিবর্তন যেভাবে হচ্ছে, সেটা আমার কাছে অনেকটা সায়েন্স ফিকশান পর্যায়ের মনে হয়েছে সব সময়। তাই সাহস করে এই বিষয়ে পড়ার জন্যই মনস্থির করি। তারপরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে প্রোগ্রামিং শিখেছি (অনেক চেষ্টার পরে) এবং তা দিয়ে আসলেই সায়েন্স ফিকশান পর্যায়ের কিছু কাজ করি।

সুবিন : সাস্ট থেকে পাশ করার পর ক্যারিয়ার শুরু করলে কোথায়? সেখানে কী কাজ করতে?
সজীব : পাশ করার পরে আমি ক্যারিয়ার শুরু করেছি এসডিএসএলে। সেখানে আমি অনেক ধরনের কাজ করেছি। আমি প্রথম কাজ করেছি ফ্লেক্স এর উপর ম্যাপ সার্ভার টিমের ক্লায়েন্টের জন্য। এই টিমে আমি উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারিনি। তবে অনেক কোড ঘেটে কিছু বাগ বের করেছিলাম। তারপরে কাজ করি, জেটুএমই টিমে, লাইভ নামের একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্রজেক্টে। আমি এই টিমে কাজ করার সময় বুঝতে পারি আমার মূল আগ্রহ সব সময় নতুন ধরনের সমস্যা সমাধানে যেই গুলো করতে একটু গবেষনা লাগে। তারপরে আমি কাজ শুরু করি লাইভের সার্ভার ডিজাইনের। এর মাঝে আমি ছোট ছোট কয়েকটা আরএনডি করি এবং অন্য কয়েকটা প্রজেক্টের জন্য ডাটাবেইজ ডিজাইন করি। সেই সাথে গ্রিড প্রজেক্টের জন্য চ্যাটিং এপ্লিকেশন ডিজাইন এন্ড ডেভেলপ শেষ করি। অতঃপর আমার হাতে কাজ আসে গ্রিডের ক্লাস্টার ডিজাইন এন্ড ডেভেলপ করার। এই সময়ে সাউথ আফ্রিকার জন্য একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরীর কথা শুরু হয়। আমি এবং সিদকী (মানযুরুর রহমান খান) প্রথমে এই সার্চ ইঞ্জিনের জন্য ১৮ দিনের একটি গবেষণা শুরু করি। তারপরে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য টিম গঠন থেকে শুরু করে তার ডেভেলপম্যান্ট এ যুক্ত ছিলাম পরের এক বছর। এর মধ্যেই গ্রিডের লোকেশন বেইসড সার্চের কাজ শেষ করি। সার্চ প্রোডাক্ট ম্যাচিউর হলে পরে আমি এসডিএসএল থেকে সাস্টে সুইচ করি।

সুবিন : সেখানে সার্চ ইঞ্জিন প্রজেক্টে কাজ করার অভিজ্ঞতাই কি পরবর্তিতে সাস্টে এসে পিপীলিকা তৈরির মূল কারণ?
সজীব : পিপীলিকা তৈরীতে যে অভিজ্ঞতা লেগেছে সেটা এসেছে এসডিএসএল থেকেই। কারণ আমার সহকর্মীরা সবাই বেশ ভালো প্রবলেম সল্ভার এবং বন্ধু ছিল। আমি তাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। তবে পিপীলিকা তৈরীর মূল কারন আসলে বাংলা কম্পিউটেশনের পথটিকে সুগম করা। আমি প্রথমে বুঝতেও পারিনি আমি শেষমেষ পিপীলিকা তৈরী করতে পারব।

সুবিন : বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরিতে কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং সেটি কিভাবে অতিক্রম করেছ?
সজীব : প্রায় তিন বছরে আমি ৩০ জনেরও বেশী ছাত্রের সাথে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস নিয়ে কাজ করেছি। এর প্রায় সবই পরবর্তীতে এই ইঞ্জিন তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয়তা অভিজ্ঞতা যুগিয়েছে। আমি প্রথম যে থিসিস গ্রুপগুলির সাথে কাজ করার সুযোগ পাই, তারা সাস্ট ২০০৪ ব্যাচের। এদের মধ্যে দুইটি গ্রুপ ছিল যারা ওয়েব ক্রলার এবং লোকেশন বেসড সার্চ নিয়ে কাজ করে আমার সাথে। এই ব্যাচের এআই সাবজেক্ট আমি পড়িয়েছিলাম। এর ল্যাব প্রজেক্টে একটি গ্রুপ আমার সাথে এডাপ্টিভ স্পেল চেকার নিয়ে কাজ করে। সাস্ট ২০০৫ এর অনেকগুলি গ্রুপ পরবর্তীতে আই আর নিয়ে কাজ শুরু করে। একটি গ্রুপ ওয়েব ক্রলার কন্টিনিউ করে। একটি গ্রুপ বাংলা ডকুমেন্টের কি-ওয়ার্ড ডিটেকশান নিয়ে কাজ করে। একটি গ্রুপ ওপেনসোর্স এর লুসিনি (lucene)-তে বাংলা ইউনিকোড সাকসেসফুলি সাপোর্ট দেয়। সেই সাথে ওয়েব ক্রলারের ক্রল করা ডাটা লুসিনিতে সার্চেবল করে। সেই সাথে তৈরী হয় পিপীলিকার ইউজার ইন্টারফেস। একই রকম ভাবে সাস্ট ২০০৬ ব্যাচের অনেকগুলি গ্রুপ আই আর নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা স্টেমিং, কি-ওয়ার্ড ডিটেকশান, লোকেশান বেইসড সার্চের উপর কাজ শুরু করে। সাস্ট ২০০৭ ব্যাচ স্ট্যামিং এবং কি-ওয়ার্ড এর কাজে বেশ অগ্রগতি নিয়ে আসে। তারপরেই আমি বুঝতে পারি যে পিপীলিকা আমরা লাইভ করতে পারব। এর মধ্যে ২০০৫ ব্যাচ এর পিপীলিকার নামকরন সহ উইজার ইন্টারফেস এর মাধ্যমে বাংলা কন্টেন্ট সার্চ করার বেসিক টুলসটি আমি সব জায়গায় প্রেজেন্টেশনে দেখাই। এই টুলসটি পরে একটি সফটওয়্যার কম্পিটিশনে প্রথম হয় এবং জিপিআইটি এই প্রোডাক্ট এর ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়, যার জন্য আমরা সবাই এখন পিপীলিকা ব্যাবহার করতে পারছি। যদিও আমি যতদূর ভেবে রেখেছি ততদূর পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আমাদের অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে তবুও আমাদের হাতে স্মল স্কেলে একটি সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে তা মোটেও কম কথা নয়।

সুবিন : তার মানে আমরা বুঝতে পারছি, কেবল প্রযুক্তিই নয়, সাথে বাংলা ভাষার উপরও তোমারদের গবেষণা করতে হয়েছে।
সজীব : অবশ্যই। এখানে আই আর এর উপর কাজ সহ বেঙ্গলি এনএলপি, এবং লিঙ্গুইস্টিকের উপর অনেক বেসিক কাজ আমাদের করতে হয়েছে। শুধু মাত্র তাই নয়। এই কাজের জন্য আমাকে মেশিন লার্নিং নামক একটি কোর্স ডিপার্টমেন্টে পড়াতে হয়েছে, যাতে করে আমার ছাত্ররা এনাফ নলেজ গেইন করে পিপীলিকায় কাজ করতে পারে।

সুবিন : বাংলাদেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, এমন কারো কারো ধারণা, সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইট থেকে ডাটা ডাটাবেজে সেভ করা হয়, আর কোনো কিছু জানতে চাইলে ডাটাবেজের উপর কুয়েরি চালানো হয়, তাতেই একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি হয়ে যায়। বিষয়টা হয়ত তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না, কিন্তু ফেসবুকে আমি সেটি দেখেছি। তুমি কি ভবিষ্যতে আমার ব্লগের পাঠকদের জন্য সার্চ ইঞ্জিনের আর্কিটেকচার নিয়ে একটা লেখা দিবে? এতে শিক্ষার্থীরা যেমন শিখতে পারবে, তেমনে সেসব ডেভেলাপারদেরও চোখ খুলবে বলে আমার ধারণা।
সজীব : অবশ্যই লিখব। আমি আমেরিকা চলে আসার কারনে পিপীলিকার কাজের উপর ডকুমেন্টেশান করে উঠতে পারিনি। তবে আশা করছি এবার শুরু করব।

সুবিন : পিপীলিকা ছাড়াও সাস্টে আরো প্রজেক্টে তুমি কাজ করেছ। সেগুলো সম্পর্কে একটু বলো।
সজীব : সাস্টে অনেকগুলি প্রজেক্টে আমি কাজ করার সু্যোগ পেয়েছি। তার মাঝে এডমিশন সিষ্টেম নিয়ে কিছু কাজ করেছি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য মঙ্গলদীপ আর সুবচন নিয়ে কাজ করেছি, এবং বিআইডব্লিউটিএ-এর অটোমেশান এর কাজ করেছি। এডমিশন সিষ্টেমের জন্য আমি কী-ওয়ার্ডলেস ডাটাবেস ম্যাপিং এর এলগরিদম ডিজাইন করেছি।

সুবিন : তোমাদের এসব প্রজেক্টে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা কেমন ছিল?
সজীব : মঙ্গলদীপ সুবচনের জন্য আমার কাজ মূলত আর্কিটেকচার লেভেলের। এই দুইটি কাজের জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারের সায়েন্স এন্ড আইসিটির ফান্ড পেয়েছি। এই ফান্ড ব্যবহার করে আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সুবচন এবং মঙ্গলদীপ সফটওয়্যার হিসেবে প্রকাশ করি। এডমিশন সিষ্টেমের জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরাই প্রথমবার সিষ্টেম ইমপ্লিমেন্ট করে। পরে আমরা প্রায় ৮ জন শিক্ষক মিলে একে প্রফেশনাল প্রোডাক্টে রুপ দেই। আর পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমরা ক্লাউড বেইসড এডমিশন সিস্টেম প্রবর্তন করি। যেখানে আপনিও আমাদের সাথে ছিলেন। তাছাড়া, বিআইডব্লিঊটিএ (BIWTA) এর প্রজেক্টেও আপনি ও আপনার কোম্পানী আমাদের সাথে কাজ করেছে। তাই আপনি ভালোই জানেন।

সুবিন : বিআইডব্লিউটএ-এর অটোমেশন প্রজেক্টের একটা অংশ ছিল ভেসেল ট্র্যাকিং ডিভাইস বানানো। যেই কাজটা অর্থায়ন করে আমার কোম্পানী, মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড। কাজটি তোমার তত্ত্বাবধানে দুজন ছাত্র সম্পন্ন করে। সেখানে আমি দেখেছি, গবেষণার জন্য বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগই তুমি তোমার ছাত্রদের দিয়ে দিয়েছ। সেটির কারণ কী?
সজীব : এটা সবসময়েই হয়েছে। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা সবসময় আমার থেকে বেশী আয় করেছে। আমি সবসময় সেটি বেশ এঞ্জয়ও করেছি। আমার প্রায় সবগুলো প্রজেক্টের মূল্যমান ছিল চার কোটি টাকা। এই প্রজেক্টে যারাই কাজ করেছে আমি চেষ্টা করেছি তাদেরকে ঢাকার সফটওয়্যার কোম্পানী গুলির কাছাকাছি সম্মানী দেওয়ার জন্য। আমি চেষ্টা করেছি তাদেরকে মনের দিক থেকে, মানের দিক থেকে এবং মূল্যায়নের দিক থেকে যথার্থ সম্মান দেওয়ার জন্য।

সুবিন : এবারে একটু অন্য আলাপে আসি। তোমার শিক্ষকতা পেশায় আসার কারণ কি?
সজীব : এসডিএসএলে আমি প্রায় সবকিছুই পেয়েছিলাম এই কথাটা সত্যি। কিন্তু তবুও, সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আমি যতখানি কাজ করতে চেয়েছিলাম তা পারিনি। আমার মনে হয়েছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুবাদে আমি সেই সুযোগ পাব। কিন্তু শাবিপ্রবি এবং সিএসই ডিপার্টমেন্ট আমার এই ভাবনা কে কয়েকটি ছোট ঘটনার মাধ্যমে ভিন্ন মাত্রা দেয়। আমি ২০০৯ সালে আমাদের ডিপার্টমেন্টের সিএসই কার্নিভালে গিয়ে বুঝতে পারি সবাই মানে আমার শিক্ষক এবং জুনিয়র ছাত্র-ছাত্রীরা ধরেই নিয়েছে যে আমি সাস্টে যাব। এই ব্যাপারটি আমাকে সাস্টের সাথে ইমোশনাল এটাচমেন্ট এনে দেয়। যেই কারনে আমি আমার তখনকার বেতনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ সেলারীতে জয়েন করি। আমি আমার ফ্যামিলির ব্যায়ভার বহন করি আমার পুরনো কোম্পানির সেলারী একাউন্ট থেকে। আমি কখনো ভাবিনি আমি কোনো প্রজেক্ট পাব। শুধুমাত্র সাস্ট এর ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আর সাস্টের সাথে ইমোশনাল এটাচমেন্টের কারনেই আমি সিএসই তে জয়েন করে ফেলি।

সুবিন : তোমার কি মনে হয় যে  ছাত্র হিসেবে এবং পরবর্তি সময়ে শিক্ষক হিসেবে সাস্টের সিএসই বিভাগে থাকার কারণে তুমি বাড়তি অনেক সুবিধা পেয়েছ, যা অন্য জায়গায় হয়তো পাওয়া যেত না?
সজীব : অবশ্যই। আমি মনে করি ব্রিলিয়ান্ট বা জিনিয়াস শব্দগুলো আমার সাথে যায়না। তবে সাস্টে আমি খুব উদ্দীপনামূলক একটা পরিবেশ আমি পেয়েছিলাম যে কারনে খুব আগ্রহ নিয়ে পরিশ্রম করে নিজের মেরিটকে আমি একটু হলেও প্রকাশ করতে পেরেছি। ছাত্র জীবনে আমি অনেক পড়ালেখা করেছি আর অনেক বেশী জানার আগ্রহের সাথে এর একটি অন্যতম কারণ ছিল কম বুঝতে পারা। সাস্ট সবসময়ই আমাকে যেকোন শূণ্যস্থান পূরন করে নেওয়ার জন্য প্রেরণা দিয়েছে। যখন শিক্ষক হয়েছি তখনও আমি একই রকম অনুভূতি পেয়েছি। তবে এই কথাগুলি যেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীকে কষ্ট না দেয়। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের একটা নিজস্ব সুর আছে। সেই সুরে নিজেকে ঠিকমত টিউন করে নিলে আর নিজের আগ্রহ অনুযায়ী পরিশ্রম করতে পারলেই সবার উন্নতি আসবে। সাস্টে আমার শিক্ষকরা, আমার সিনিওর, বন্ধু এবং জুনিয়র সবাই আমাকে আমার নিজের মত করে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

সুবিন : তুমি যে মেশিন লার্নিং কোর্সের কথা বললে, আমাদের সময়ে তো সেই কোর্সটি ছিল না। পরে অবশ্য আমি Coursera থেকে প্রফেসর Andew Ng-এর মেশিন লার্নিংয়ের কোর্সটি করি। চমৎকার বিষয়। তোমার কি মনে হয় MOOC (Massive Open Online Course) থেকে আমাদের শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকরা উপকৃত হতে পারেন?
সজীব : অবশ্যই উপকৃত হতে পারবে। আমি নিজে মেশিন লার্নিং এর জন্য এই রকম কয়েকটা কোর্সের সাহায্য নিয়েছি। আমি যদি মেশিন লার্নিং এ পড়ার জন্য মাষ্টার্স বা পিএইচডি এর জন্য অপেক্ষা করতাম তবে তা কোনদিনও সম্ভব হতোনা। আমি ততটুকুই শিখেছি যতটুকু আমার প্রয়োজন এবং তারপরে আমি তা শিখিয়েছি। MOOC সবাইকে এই সুযোগটি করে দিয়েছে। যে কেউ তার প্রয়োজন অনুযায়ী একটা কোর্স করে, আনুষঙ্গিক হোম ওয়ার্ক করে নিজের জন্য দরকারী অভিজ্ঞতাটুকু নিয়ে নিবে। এটাই MOOC এর একটা শক্তিশালী দিক।

সুবিন : বাংলাদেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে যদিও তুমি খুব বেশিদিন সরাসরি কাজ করো নি, কিন্তু সাস্টের শিক্ষক থাকাকালীন তুমি বেশ কিছু সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে। সেগুলোকে কাছ থেকে দেখেছ। দেশের সফটওয়্যার শিল্প নিয়ে তোমার মূল্যায়ন কী?
সজীব : মূল্যায়ন মিশ্র। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মেধাবী লোকজন আছে। এটা শুধুমাত্র আমি নই সবাই জানে। কিন্তু এদেরকে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো সামনে এগিয়ে আসতে রাজি না। অনেকেই মনে করে সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র এই কারনে দেশে সত্যিকার অর্থে ব্যবসা করাটা কঠিন। তবে এত কিছুর পরেও অনেকে শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং করে এখনো নিজের কোম্পানিটিকে টিকেয়ে রাখছেন। এতে করে আমাদের এখন পর্যন্ত কিছু সুনাম হয়েছে। আমি বলব এই সুনামটুকু নিয়ে আমাদের উচিৎ মধ্যম আয়ের অন্যান্য দেশে নিজেদের সফটওয়্যার বা সার্ভিস সেল করার জন্য সবার এক যোগে এগিয়ে আসা। এতে করে আমাদের বাজারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে।

সুবিন : তুমি যেহেতু বাংলা সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে নিজের উদ্যোগে কাজ করেছ, তাতে খানিকটা বোঝা যায় যে বাংলা ভাষার প্রতি টানটা তোমার একটু বেশিই। তো বাংলা ভাষা শিক্ষা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যাপারে তোমার কি অভিমত?
সজীব : আমার নিজের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা অনেকটা ব্যক্তিগত। আমি বরং আমার জানামতে কয়েকটা গবেষণার কথা বলি। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবারই নিজের ভাষার প্রতি একটা দূর্বলতা থাকে। প্রায় সবাই মনে করে নিজের ভাষায় পড়তে পারলে কোন একটা কঠিন টপিক হয়তো আরেকটু সহজ মনে হতো। এজন্যই অনেক উন্নত দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট গুলিকে তাদের মাতৃভাষায় পড়ানো হয়। আমাদের দেশেও একজন ছাত্র বা ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন একটি বিষয়ে চার বছর ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করেও তার বিষয় সম্পর্কে ইংরেজীতে প্রায় কিছুই বলতে পারেনা। এদেরকে যদি অন্তত কয়েকটা বেসিক বিষয়ে বাংলায় পড়িয়ে তার সাথে ইংরেজীর টার্ম গুলিও পরিচয় করানো যেত তবে হয়তো ভালো ফল পাওয়া যেত। তাই আমি মনে করি মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ার সুযোগ করার জন্য আমাদের সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে আসা উচিৎ।

সুবিন : আমাদের দেশে অনেক ছেলেমেয়ে আছে, যারা কারণে-অকারণে নিজেদের বঞ্চিত মনে করে। আমি যদি তাদের মনে করিয়ে দেই যে সাস্টে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সময় তোমার নিজের কোনো কম্পিউটার ছিল না, তারপরেও তুমি ছিলে ভার্সিটির সেরা প্রোগ্রামারদের একজন, আবার সেই সাথে তোমার ক্লাসের ফার্স্ট বয়, তাতে তুমি নিশ্চয়ই মাইন্ড করবে না। এ ব্যাপারে তোমার কী বক্তব্য?
সজীব : প্রথমত, আমি অবশ্যই মাইন্ড করবনা। আমি বরং খুশী মনেই এই কথাটা স্মরণ করি। এমনকি ৪র্থ সেমিষ্টার পরে আমার আর শাবিপ্রবিতে পড়ালেখা করারও কথা ছিল না। তবু সবকিছু কেমন করে মিলে যায়। যারা মনে করে তারা বঞ্চিত তাদেরকে এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আমি নিজেকে যখন এই অবস্থায় পেয়েছি তখন আমি কি করতে পারি তা নিয়ে অনেক ভেবেছি। কখনো খারাপ লেগেছে, আবার ঠিক তারপরেই ব্যাপারটিকে আমার নিজের কাছে এডভেঞ্চার মনে হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটিং রিসোর্স ব্যাবহার করে বড় হয়েছি। বন্ধুরাও আমাকে সাহায্য করেছে। অনেক বড় ভাইদের কাছে আমি বই চেয়ে নিয়ে এসেছি। আমার প্রথম বড় প্রোগ্রামটি লিখি আমার খাতায়। সেটা ডিবাগ করি খাতায়। পড়ে তার একটা অংশ আমি কোড করে সঠিক উত্তর পেয়েছি। এতে করে আমি প্রোগ্রামিং পারব কিনা সেই ভূতটা চিরতরে বিদায় নিয়েছিল। যারা নিজেকে বঞ্চিত মনে করে তাদেরকেও আমি বলব নিজের আশেপাশের যতটুকু সুযোগ আছে ততটুকুই কাজে লাগানোর জন্য। একসময় এই অভিজ্ঞতাগুলি আসল কাজের ক্ষেত্রে বিশাল এক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে। আমি শিক্ষক হওয়ার পরেও খুব একটা রিসোর্স পাইনি। কিন্তু আমি কখনোই অভিযোগ করিনি। বরং বিভিন্ন মাধ্যমে গবেষণার প্রপোজাল লিখে ফান্ড জোগাড় করার চেষ্টা করেছি। সেই ফান্ডের করা কাজ থেকে লভ্যাংশ আমার ডিপার্টমেন্টকে অনেকদিন সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। যে কেউ চাইলেই অভিযোগটুকু বাদ দিয়ে নিজের চারপাশের রিসোর্স দিয়ে একজনের প্রয়োজনীয়তাকে ধীরে ধীরে মেটাতে পারে। এতে হয়তো সময় লাগবে কিন্তু যেই অভিজ্ঞতাটুকু অর্জন হবে তা সারা জীবনের জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।

এরকম ১২টি সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে “প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার গাইডলাইন : এক ডজন প্রোগ্রামারের কথা”। বইটি পাওয়া যাচ্ছে নীলক্ষেতের হক লাইব্রেরি ও রকমারি ডট কম-এ। বিস্তারিত জানতে ওপরের ছবিতে ক্লিক করুন।

সুবিন : সজীব, তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তোমার ব্যস্ত জীবন থেকে তিন ঘণ্টা সময় দেওয়ার জন্য।
সজীব : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। এত ধৈর্য্য নিয়ে আমার কথা শোনার জন্য।

Leave a Reply