সরাসরি ভিডিও-র মাধ্যমে আলাপচারিতার জন্য ফায়ারফক্স নিয়ে এলো ফায়ারফক্স হ্যালো। এটি ফায়ারফক্স ব্রাউজারের লেটেস্ট ভার্শনে বিল্ট-ইন আছে। ফায়ারফক্স হ্যালোতে ওয়েবআরটিসি (WebRTC) নামক একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই কেবল ফায়ারফক্স নয়, ওয়েবআরটিসি প্রযুক্তি বিশিষ্ট অন্যান্য ব্রাউজার যেমন গুগল ক্রোম কিংবা অপেরাতেও চলবে ফায়ারফক্স হ্যালো।
ফায়ারফক্স হ্যালো দিয়ে অডিও এবং ভিডিও মাধ্যমে আলাপচারিতা করা যাবে। যেহেতু এটি ফায়ারফক্সে বিল্ট-ইন হিসেবে থাকছে, তাই এটি বেশ নিরাপদ বলেই দাবি করেছে ফায়ারফক্সে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মজিলা।
ফায়ারফক্স ব্রাউজারের সাম্প্রতিক ভার্শন থাকলে কোনো একাউন্ট তৈরি বা সাইন-ইন করার প্রয়োজন পড়বে না। হ্যালো চালু করে যার সাথে আলাপ করতে চান, তাকে একটি লিঙ্ক পাঠাতে হবে। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলে দুজনের আলাপচারিতা শুরু করা যাবে।
আপনার ব্রাউজারে হ্যালো বাটন খুঁজে না পেলে কিভাবে সেটি খুঁজে পেতে হবে জানতে এখানে ক্লিক করুন। ফায়ারফক্স হ্যালো সম্পর্কে আরো জানা যাবে ওদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।
গিট কী
দ্রুত গতির ডাটা ইনটিগ্রিটি এবং ডিস্ট্রিবিউটেড সাপোর্টসহ ডিস্ট্রিবিউটেড রিভিশন কন্ট্রোলই হচ্ছে গিট (git)। ২০০৫ সালে লিনাক্স কার্নেলের জন্য লিনাস টারভাল্ডস গিট ডিজাইন এবং ডেভেলপ করেন। জিএনইউ জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স এর অধীন লিনাক্সের মত গিটও ওপেনসোর্স এবং এখন পর্যন্ত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্সন কন্ট্রোল সিস্টেম। দুটি জনপ্রিয় ওপেনসোর্স প্রোজেক্ট, অ্যান্ড্রয়েড এবং এক্লিপ্স ডেভেলপার টিমও গিট ব্যবহার করে।
গিট কেন ব্যবহার করা হয়
যেহেতু গিট একটি ভার্সন কন্ট্রোল সফটওয়্যার সেহেতু কোন সফটওয়ারের ভার্সন গিট এর মাধ্যমে সহজেই কন্ট্রোল করা যায়। গিট এর মাধ্যমে বিভিন্ন ডেভেলপার একই সফটওয়ারের ডেভেলপমেন্টে অংশ নিতে পারেন, পরিবর্তন করতে পারেন, এবং একজন নির্দিষ্ট ডেভেলপার সেই পরিবর্তন চূড়ান্ত করতে পারেন। যেহেতু গিট একটি ডিস্ট্রিবিউটেড ভার্সন কন্ট্রোল সিস্টেম, এটি সার্ভার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। একটি ডেডিকেটেড গিট সার্ভার সফটওয়্যার বিভিন্ন ফিচারগুলোর মধ্যে এক্সেস কন্ট্রোল যোগ করা, ওয়েবের মাধ্যমে গিট রিপজিটরির কন্টেন্ট প্রদর্শন করা এবং একের অধিক রিপজিটরি পরিচালনা করতে সাহায্য করে। প্রাথমিকভাবে যদিও গিট লিনাক্সের জন্য ডেভেলপ করা হয়েছে, তারপরও এটা সবচেয়ে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম, যেমন বিএসডি, সোলারিস, ওএস এক্স, এবং মাইক্রোসফটের উইন্ডোজও সাপোর্ট করে।
গিটহাব কী
গিটহাব (github) হচ্ছে ওয়েব-ভিত্তিক গিট রিপজিটরি হোস্টিং সেবা, যা গিট এর ডিস্ট্রিবিউটেড রিভিশন কন্ট্রোল এবং সোর্স কোড ম্যানেজমেন্ট (এসসিএম) এর কার্যকারিতা এবং ফিচার উপস্থাপন করে। গিটের মত কমান্ড লাইন নয়, বরং গিটহাবে পাবেন ওয়েব-ভিত্তিক গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস এবং ডেক্সটপ আর মোবাইলের জন্য ক্লায়েন্ট। আরও সহজ করে বলতে গেলেঃ বন্ধু, সহকর্মী, সহপাঠী এমনকি পুরোপুরি অপরিচিত কাউকে আপনার কোড শেয়ার করার একটি উত্তম জায়গা হচ্ছে গিটহাব। আট মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী একত্রে গিটহাব ব্যবহার করে চমৎকার সব জিনিস তৈরি করছে।
গিটহাব ফ্রি এবং পেইড দুইরকমই হোস্টিং করে। ব্যক্তিগত রিপজিটরির জন্য সাধারণত পেইড করতে হয়। গিটহাব মূলত ওপেনসোর্স সফটওয়্যার প্রোজেক্ট হোস্টিং করে।
গিটহাব ব্যবহারের সুবিধা
১. আপনার ওপেনসোর্স প্রেজেক্টে অবদান রাখার জন্য।
২. যেকোনো প্রেজেক্টের জন্য ফিল্ড-টেস্ট টুলস।
৩. গিটহাবে পাবেন ইনটিগ্রেটেড ইস্যু ট্র্যাকিং সুবিধা।
৪. একত্রে কাজ করার সুবিধা।
৫. একই প্রতিষ্ঠানের বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউটেড টিম পরিচালনা করা।
৬. সিনট্যাক্স হাইলাইটেড কোড।
ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে, যখন আমি কম্পিউটারে প্রচুর গেম খেলতাম এবং প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করি নাই, তখন আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়ে টাইপিং প্র্যাকটিস করতাম। এর মূল কারণ ছিল নিজেকে একটু সান্ত্বনা দেওয়া যে আমি কেবল গেম খেলে সময় নষ্ট করছি না, মাঝে-মধ্যে একটু ভালো জিনিসও শিখছি। পরবর্তি সময়ে এই টাচ টাইপিং স্কিল আমার জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়।
দ্বিমিক ক্লাসরুমে বা অন্য কোথাও মাঝে মাঝে যখন পড়াই (এখন আর পড়াই না), তখন দেখি যে অনেক শিক্ষার্থী ১০ লাইনের কোড দেখে দেখে টাইপ করতে ২০ মিনিট সময় নিয়ে নিচ্ছে। এতে আমি অত্যন্ত বিরক্ত হই এবং শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ আমি যদি দুই ঘণ্টা ক্লাস নেই, আর সেখানে ১০ টা প্রোগ্রামিং সমস্যা নিয়ে কাজ করার প্ল্যান করি, তো দেখা যায় কেবল দ্রুত টাইপিং করতে না পারার কারণেই ক্লাসে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে।
টাচ টাইপিং কী?
টাচ টাইপিং হচ্ছে টাইপ করার একটা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে হাতের সবগুলো আঙ্গুল ব্যবহার করা হয় এবং টাইপ করার সময় কিবোর্ডের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়ে না। আজ থেকে একশ বছরেরও বেশি সময় আগে এই পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই উইকিপিডিয়া আর্কটিকেল পড়া যেতে পারে।
টাচ টাইপিং কেন করা উচিত?
১) সময় বাঁচানোর জন্য। ধরা যাক তোমার বয়স হচ্ছে ২০ বছর। এবং তুমি আরো কমপক্ষে ৪০ বছর কম্পিউটারে কাজ করবে। তো পেশা ভেদে কম্পিউটারে কাজ করার সময়টা বিভিন্ন হতে পারে তবে সব পেশার মানুষেরই কম-বেশি কম্পিউটার ব্যবহার করার দরকার হয়। আর পেশাগত কাজ ছাড়াও ব্যক্তিগত অনেক কাজে আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি। এখন ধরা যাক কোডিং, লেখালেখি (রিপোর্ট লেখা, ইমেইল, চ্যাটিং, ফেসবুকে পোস্ট করা, কমেন্ট করা, টুইট করা ইত্যাদি) এসব কাজে গড়ে প্রতিদিন চার ঘণ্টা সময় ব্যায় হয়। এখন এমনিতে কিবোর্ড দেখে দেখে এক বা দুই আঙ্গুলে টাইপ করলে গড় স্পিড হবে ৩০ – ৩৫ wpm (ওয়ার্ড পার মিনিট)। আর টাচ টাইপিং করলে মিনিটপ্রতি স্পীড ৫০ থেকে ৮০ শব্দ পর্যন্ত হয়। তো ধরি মিনিটপ্রতি স্পীড ৬০ শব্দ (৬০ ধরলাম যেহেতু আমার নিজের ইংরেজি টাইপিং স্পীড মিনিটপ্রতি ৬০ শব্দ)। এখন এই চার ঘণ্টার কাজ কিন্তু তিন ঘণ্টায় (বা আরো কম সময়ে) করে ফেলা যাচ্ছে। তাহলে বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে যদি ৩০০ দিন কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়, এবং গড়ে প্রতিদিন টাইপিংয়ের কারণে এক ঘণ্টা সময় বাঁচে, তাহলে বছরে ৩০০ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হয়। তাহলে ৪০ বছরে সাশ্রয় হবে ৪০ x ৩০০ = ১২০০০ ঘণ্টা (বার হাজার ঘণ্টা)! এই অতিরিক্ত সময়টায় আরো বেশি কাজ করা যেতে পারে কিংবা অনেকগুলো ফুটবল ম্যাচ বা সিনেমা দেখা যেতে পারে। কতগুলো সেটা হিসাব আর আমি করে দিলাম না।
২) প্রোগ্রামিং করার সময় টাইপ করার দিকেই যদি আমার বেশি শ্রম ও মনোযোগ দিতে হয়, তাহলে সেটা প্রোগ্রামিং শেখার গতিকে ধীর করে দেয়। তাই প্রোগ্রামিং শেখার জন্যও টাচ টাইপিং উপকারি।
৩) শেষ উপকার হচ্ছে স্বাস্থ্য বিষয়ক। আমরা যদি সঠিকভাবে চেয়ারে বসে কাজ করি এবং হাতের পজিশন ঠিকভাবে কিবোর্ডের উপর রাখি, তাহলে ইনজুরির সম্ভাবনা অনেক কমে যায় (কারো যদি মনে হয় যে আমি শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছি, সে Repetitive strain injury লিখে গুগল সার্চ করতে পারে)।
টাচ টাইপিং কীভাবে শিখব?
সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিখতে হবে। ডেস্কটপ ভিত্তিক কিংবা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, যেকোনো ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করলেই হয়। গুগলে সার্চ করলে টাচ টাইপিং শেখার অনেক ফ্রি সফটওয়্যার পাওয়া যাবে।
সুস্থ থাকো, আনন্দে থাকো, জ্ঞান অর্জন করো, টেকাটুকা কামাও – শুভকামনা রইল।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ও ফেসবুক গ্রুপে প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত সাহায্যের জন্য অনেকেই পোস্ট করে। আবার অনেকসময় সেসব পোস্টের সাথে কোডও থাকে। কেউ কেউ কোডের স্ক্রিনশট নেয়, কেউ বা সরাসরি কোড পেস্ট করে। এতে কোড দেখতে অনেক বাজে লাগে এবং বোঝা কঠিন হয়ে যায়। ফেসবুকে কমেন্ট আকারে কোড পেস্ট করলে ইনডেন্টেশন নষ্ট হয়ে যায়। আর পাইথনের মতো ল্যাঙ্গুয়েজ যেখানে ইনডেন্টেশন অনেককিছু নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে তো ইনডেন্টেশন না থাকলে তেমন কিছুই বোঝা যায় না। আসলে নিজের কোড অন্যকে সাময়িক সময়ের জন্য দেখাতে চাইলে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে কোড শেয়ার করার ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করা। এরকম তিনটি ওয়েবসাইটের নাম দিয়ে দিচ্ছি :
এখানে নাম লিখতে হবে, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সিলেক্ট করতে হবে, কোড পেস্ট করতে হবে, তারপরে Paste! বাটনে ক্লিক করলে যেই নতুন লিঙ্কটি তৈরি হবে, সেটি দিয়েই কোড শেয়ার করা যাবে।
আমার মূল ওয়েবসাইট (subeen.com) দ্রুপাল দিয়ে তৈরি। কেন দ্রুপাল বেছে নিয়েছিলাম, তার কারণ হচ্ছে ওইসময় একটা প্রজেক্টে কাজ করতাম যেখানে দ্রুপাল ব্যবহার করতে হয়েছিল, সম্ভবত সেখান থেকে দ্রুপাল ব্যবহার করার উৎসাহ পেয়েছিলাম। ওয়েবসাইটটা মাঝে মাঝে আপডেট করার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে দ্রুপাল কোর যখন আপডেট করতে হয়, সেটা ম্যানুয়ালি করতে হয় এবং আমার গুগল সার্চ করে বের করতে হয়ে কীভাবে আপডেট করে। তাই নিজের ব্লগে বাংলা ভাষায় লিখে রাখলাম, যেন পরবর্তী সময়ে গুগল না করে আমার ব্লগেই আমি সার্চ করতে পারি।
কীভাবে দ্রুপাল (ভার্শন ৭) কোর আপডেট করতে হয়?
দ্রুপাল কোর ম্যানুয়ালি আপডেট করতে হলে নিচের স্টেপগুলো অনুসরণ করতে হবে :
১) ডাটাবেজেের ব্যাকআপ নিতে হবে।
২) দ্রুপালের বর্তমান ভার্শনের সর্বশেষ রিলিজ ডাউনলোড করে সাইটে আপলোড করতে হবে।
৩) সাইটে আপলোড করার পরে দ্রুপাল প্যাকেজ আনজিপ করতে হবে।
৪) ওয়েবসাইটের [yourdrupalsitename]/admin/config/development/maintenance এ গিয়ে সাইটে মেইনটেনেন্স মোডে নিয়ে যেতে হবে।
৫) দ্রুপালের বর্তমান ব্যবহৃত ইনস্ট্যান্সের /sites ডিরেক্টরি ছাড়া বাকী সব ফাইল ও ডিরেক্টরি মুছে ফেলে নতুন ভার্শনের ফাইল ও ডিরেক্টরিগুলো পেস্ট করে দিতে হবে (sites ডিরেক্টরি ব্যাতীত)।
৬) এরপর সাইটে এডমিন হিসেবে লগিন করে আপডেট স্ক্রিপ্ট চালাতে হবে। ব্রাউজারের এড্রেসবারে সরাসরি এই লিঙ্ক পেস্ট করলে আপডেট স্ক্রিপ্ট চলবে : http://[yourdrupalsitename]/update.php
৭) আপডেট করা শেষ হলে ওয়েবসাইটকে মেইনটেনেন্স মোড থেকে ফিরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে হবে।
বি.দ্র. [yourdrupalsitename] এর জায়গায় নিজের ওয়েবসাইটের নাম দিতে হবে। যেমন আমার ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে subeen.com
শেষ হল Code it, Girl-এর প্রথম ইভেন্ট – প্রোগ্রামিংয়ের ওপর দিনব্যাপী কর্মশালা। ২৩ টি স্কুল/ কলেজ থেকে মোট ৪৩ জন ছাত্রী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে। ওয়ার্কশপটি ছিল আট ঘণ্টার এবং ওয়ার্কশপে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ব্যবহার করে হাতে-কলমে প্রোগ্রামিং করে। কর্মশালার বেশিরভাগ সময়ই তারা কাটায় পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে নানান রকমের প্রোগ্রামিং করে। এছাড়া সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার ও লিনাক্সের ব্যবহার সম্পর্কে তারা ধারণা লাভ করে ও আওয়ার অব কোড-এ অংশ নেয়।
কর্মশালাটি পরিচালনা করেন দ্বিমিক কম্পিউটিং-এর তামিম শাহরিয়ার সুবিন এবং তাহমিদ রাফি। তাদের সাথে আরো ছিলেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী আশিকুর রহমান মুশফিক এবং রাশিদুল হাসান সৈকত।
ইভেন্টটি স্পন্সর করেছে হাফিযা খাতুন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। এই ইভেন্টের ভেন্যু পার্টনার হিসাবে ছিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়। ইন্সপিরেশন পার্টনার ছিল কিশোর আলো। পার্টনার হিসাবে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। আর ওয়ার্কশপের পরিকল্পনা ও সকল প্রকার একাডেমিক সহযোগীতায় ছিল দ্বিমিক কম্পিউটিং।
সন্ধ্যায় ওয়ার্কশপ-এর সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক জনাব মুনির হাসান, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান তৌহিদ ভুঁইয়া, ভ্যানটেজ ল্যাবস এর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মোজাম্মেল হক, Code it, girl এর মেনটর এবং দ্বিমিক কম্পিউটিং এর সহপ্রতিষ্ঠাতা তামিম শাহরিয়ার সুবিন, স্পন্সর হাফিযা খাতুন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে ফেরদৌস বাপ্পি এবং আরো অনেকে। আর Code it, girl আয়োজকদের পক্ষ থেকে কথা বলেন আফরীন হোসেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যার অনুষ্ঠানে আসতে না পারলেও ফোন করে ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন এবং এই উদ্যোগ এর সাথে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করেন। সমাপনী পর্বে আয়োজকরা দেশে ও বিদেশে বড় বড় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সফল নারীদের নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশান প্রদর্শন করেছেন যেটা অংশগ্রহণকারীদের প্রোগ্রামিং শিখতে আরও উৎসাহিত করেছে।
Code it, girl! একটি অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, এর উদ্যোক্তারা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আয়োজকরা হলেন আফরীন হোসেন, মিরফাত শারমিন, রিজভী বিন ইসলাম, মোশ্তাক আহমেদ ম্যাক, তাপস পাল, আশিকুর রহমান মুশফিক, শুভ্র সরকার, রাশিদুল হাসান সৈকত, ওয়াজদা আখতার এবং নাদিয়া রাহমান বৃষ্টি। আয়োজকরা সবাই এক সময় ওয়ালট ডিজনির অংশ, প্লেডম বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডে গেম ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করতেন।
Code it, girl! এর চেষ্টা থাকবে অনলাইন গ্রুপ এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, ব্লগ, বই, তথ্য এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মেয়েদের কে নিজে নিজে প্রোগ্রামিং শিখতে সাহায্য করা। গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে আছেন বেশ কিছু দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার যারা এই কাজে সাহায্য করবেন। আর সুযোগ পেলে এরকম কিছু ওয়ার্কশপের আয়োজন করারও ইচ্ছা আছে এই প্রতিষ্ঠানের। উদ্যোক্তারা আশা করেন ধীরে ধীরে মেয়েরা কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে এবং প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করতে আরও বেশি উৎসাহিত হবে তাদের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
ফেসবুক গ্রুপ এর লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/groups/292738210923130/
পেইজের লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/codeitgirl
বিশ্বখ্যাত টেক কোম্পানী গুগল তাদের সার্ভিসগুলোর মধ্যে একটি নতুন সেবা যোগ করল, সেটি হচ্ছে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস। বর্তমানে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও খুব দ্রুত এই সার্ভিস বিশ্বের অন্যান্য দেশেও চালু হবে। শুরুতে প্রতিবছরের জন্য ১২ ডলার করে দিতে হবে । গুগল আপনাকে একটা ডোমেইন নামের সাথে ব্যক্তিগত নিবন্ধন, ফ্রি জিমেইল থেকে ইমেইল ফরওয়ার্ড করা, প্রায় ১০০টির তম সাব-ডোমেইনের জন্য সাপোর্ট নিশ্চিত করবে ।
ইতিমধ্যে গুগল কিছু কোম্পানিকে নিজেদের অংশভুক্ত করেছে যেন ব্যবহারকারীদেরকে দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরি করতে সাহায্য করা যায়। যেমন : Squrespace, Weebly, Wix, তবে এদের সেবা নিতে হলে আপনাকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। গুগল ঘোষণা করেছে যে, Blogger ব্যবহারকারীরাও নিজস্ব ডোমেইনে ব্লগার ব্যবহার করতে পারবে ।
গুগল আরও কিছু নতুন সুবিধা যোগ করছে, যেমনঃ ডোমেইন পরিচালনা করার জন্য সহজ ড্যাশবোর্ড, ওয়েবসাইট এবং ইমেইল সেটিংস, উন্নত সার্চ এবং সাজেশন, ডাইনামিক DNS ইন্টিগ্রেশন এবং প্রায় ৬০টি নতুন ডোমেইন Ending।
গুগলের এই সার্ভিসটি বর্তমানে বেটা হিসেবে আছে। গত বছরের জুন মাসে পরীক্ষামূলকভাবে অল্প কিছু ব্যবহারকারীর জন্য গুগল সার্ভসটি চালু করে। বর্তমান সার্ভিসের বেশির ভাগ উন্নয়ন করা হয়েছে আগেকার টেস্টারদের পরামর্শের উপর নির্ভর করে। ধারণা করা হচ্ছে GoDaddy সহ অন্যান্য শীর্ষ ডোমেইন বিক্রেতারা এবার বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেই পড়তে যাচ্ছে।
[থেরাপ সার্ভিসেস লিমিটেড কর্তৃক আয়োজিত নিয়মিত ওয়েবিনারের একটি পর্ব ছিল প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার নিয়ে। সেখানে বক্তা ছিলেন থেরাপের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) মোজাহেদুল হক আবুল হাসনাত (মাসুম)। থেরাপ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে সেই ওয়েবিনার থেকে টেক্সটে রূপান্তর করে আমার ব্লগের পাঠকদের জন্য পোস্ট করলাম। এটি চতুর্থ ও শেষ পর্ব।]
ইন্ডাস্ট্রি এখন কোন দিকে যাচ্ছে
ইন্ডাস্ট্রি এখন ক্লাউড ভিত্তিক SaaS টাইপ প্রোডাক্ট এর দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ এখন নতুন সফটওয়্যার ডেভেলপ হলে সেটা ক্লাউডের মাধ্যমে করে, আর ইউজাররা ওয়েবের মাধ্যমে সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবং মাসিক বা বাৎসরিক ফি প্রদান করে। SaaS মডেলটা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। এরপর আছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান। এটা সম্পর্কে তোমরা সবাই জান। কিন্তু একটা জিনিস আমরা অবহেলা করি, সেটা হল, আমি শুনেছি, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জাভা’র পরিবর্তে অ্যান্ড্রয়েড এর কোর্স করাচ্ছে। এটা আসলে ঠিক না। শুধু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট করলে তো হবে না, মোবাইলটা হলে ফ্রন্টএন্ড। সব অ্যাপ্লিকেশানের ব্যাকএন্ড আছে, তো ব্যাকএন্ডটাও করতে হবে। কাজেই শুধু মোবাইল ডেভেলপমেন্ট শিখলে হবে না, ব্যাকএন্ডও শিখতে হবে। বর্তমানে ক্লাউডের জনপ্রিয়তার কারণে ভালো কোন আইডিয়া গ্রাহকদের কাছে খুব সহজেই পৌঁছান যায়। PaaS এর মাধ্যমে খুব সহজেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করা যায়। যেমনঃ তুমি যদি গুগল অ্যাপ ইঞ্জিন শিখো তবে এটাতে ডাটাবেজও আছে, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের সব কিছুই আছে এবং একটা ল্যাঙ্গুয়েজের উপর ভিত্তি করে একটা প্রোডাক্ট তৈরি করতে পার এবং এই প্রোডাক্টটা ১০ জন ইউজার ব্যবহার করলে যে কার্যকারিতা দেখাবে ১০ লক্ষ ইউজার ব্যবহার করলেও একই কার্যকারিতা দেখাবে।
যেই যেই ল্যাঙ্গুয়েজ এখন জনপ্রিয়
জাভা অনেক দিন আগের থেকেই জনপ্রিয়। রুবি, পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট। জাভাস্ক্রিপ্ট গত ৫/৬ বছরে খুবই জনপ্রিয় হয়ে গেছে। সি# এবং পিএইচপি বাংলাদেশে অনেক চাহিদা। লোকাল কোম্পানিগুলো অনেক বেশি ডট নেট এবং পিএইচপি ব্যবহার করে। যারা লোকাল কোম্পানিতে কাজ করতে চাও, তারা এগুলো শিখতে পার। যেহেতু এগুলো সহজ এবং অনেক লোক এগুলো উপর কাজ করে, যদিও কাজও অনেক কিন্তু অনেক প্রতিযোগিতাও আছে। তাই শত শত প্রোগ্রামার থেকে ভাল প্রোগ্রামার খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। বাংলাদেশে জাভা, রুবি, পাইথন এইসব প্রোগ্রামার খুব বেশি নাই, তাই তোমরা যারা এই সব ল্যাঙ্গুয়েজে ভাল করবা, তারা ভাল জব পাবা। বর্তমানে ফাংশনাল প্রোগ্রামিংও জনপ্রিয়। আর এ প্রোগ্রামিং করার প্লাটফরম হচ্ছে node.js এবং Scala। node.js হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে ব্যাকএন্ডে কাজ করার প্লাটফরম। এটাও বেশ জনপ্রয় হচ্ছে। অনেকগুলো নোএসকিউএল ডাটাবেজ আছে। এর মধ্যে MongoDB সবচেয়ে জনপ্রিয়।
জাভা ওয়ার্ল্ড
যেহেতু থেরাপ জাভা ভিত্তিক। তাই জাভা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। অনেক মিথ আছে বাংলাদেশে, যেমন জাভা একটি মৃত ল্যাঙ্গুয়েজ অর্থাৎ জাভার জনপ্রিয়তা কম। বাংলাদেশের লোকাল ইন্ডাস্ট্রির সাপেক্ষে এটা সত্য। কারণ, লোকাল কোম্পানি গুলো ডট নেট বেশি ব্যবহার করে তারপর পিএইচপি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী চিন্তা করলে জাভা হচ্ছে দ্বিতীয় জনপ্রিয় ল্যাঙ্গুয়েজ – তাইওবি(TIOBE) এর ভিত্তিতে। প্রথম ল্যাঙ্গুয়েজ হচ্ছে সি। আর জাভা হচ্ছে এন্টারপ্রাইজ ওয়ার্ল্ডে ১ নম্বর ল্যাঙ্গুয়েজ। জাভার কতগুলো ফ্রেমওয়ার্ক আছে। যারা জাভা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাও, তারা ফ্রেমওয়ার্কগুলো শিখে ফেলতে পার। স্প্রিং হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাভা ফ্রেমওয়ার্ক। স্প্রিং একটি বিশাল ফ্রেমওয়ার্ক। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, পুরোটা একসাথে শেখার দরকার নাই। একটু একটু করে শিখলেই চলবে। যারা স্প্রিং দিয়ে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান বানাতে চাও, তারা স্প্রিংএমভিসি শিখতে পার। JEE হচ্ছে Java Enterprise Edition, এটাও একটা ফ্রেমওয়ার্ক। এটাও শিখতে পার। হাইবারনেটও শিখতে পার। জাভা ওয়ার্ল্ডে কিছু টুল ব্যবহার করা হয়। এখানে দুইটা টুলের কথা উল্লেখ করলাম। একটা Ant আর একটা Maven. ছাত্র অবস্থায়ই এগুলো শিখে রাখা ভাল।
বাংলাদেশে কী করা যায়
বাংলাদেশে বেশ কিছু ভাল সফটওয়্যার কোম্পানি আছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো ছোট। ছোট মানে কোম্পানিগুলোতে হয়ত ১০০/২০০ বা ২০/৩০ জন কর্মী আছে। কাজেই অনেক মানুষ এসব কোম্পানি সম্পর্কে জানে না। পেপারে হয়তো এদের ছবি দেখনা, টিভিতে হয়তো এদের এড দেখ না। কিন্তু এরা যথেষ্ট ভাল কোম্পানি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কোম্পানিগুলো ভালো লোক খুঁজছে, থেরাপ তো খুঁজছেই সাথে আরও যেসব ভাল কোম্পানি আছে, তারাও ভাল প্রোগ্রামার, টেস্টার খুঁজছে, কিন্তু পাচ্ছে না। আবার অনেক ভাল প্রোগ্রামার, টেস্টারও আছে যারা ভালো কোম্পানি খুঁজে পায়নি। ভালো কোম্পানি না পেয়ে হয়তো কোন বাজে কোম্পানিতে ঢুকে পরে। তাই তোমাদেরকে ভাল করে খোঁজ খবর নিতে হবে। বাংলাদেশে বেশ কিছু সফটওয়্যার কোম্পানি আছে যারা বড় হতে পারছে না বা বড় হবার লিমিটিং ফ্যাক্টর হচ্ছে ভালো লোক পাচ্ছে না। এদের হাতে প্রচুর কাজ আছে, প্রচুর প্রোজেক্ট আছে, প্রচুর প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারবে, অনেক কাজ নিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু এই কাজ করার জন্য যে পরিমাণ লোক দরকার সেই লোকজন নাই। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় লিমিটিং ফ্যাক্টর কোম্পানিগুলোর জন্য। যারা চাকরি করতে চাও না, তাদের জন্যও এখন খুব ভালো সময়। যাদের মাথায় ভালো সফটওয়ারের আইডিয়া আছে, প্রোডাক্টের আইডিয়া আছে তারা স্টার্টআপ করতে পার। বাংলাদেশে এখন ছোটখাট বেশকিছু স্টার্টআপ আছে, যারা ৩/৪ জন মিলে একটা স্টার্টআপ তৈরি করে, বা কিছু প্রোডাক্ট তৈরি করে, গেমস তৈরি করে। অর্থাৎ স্টার্টআপ করার জন্য এখন সবচেয়ে ভাল সময়।
থেরাপ সার্ভিসেস লিমিটেড কর্তৃক আয়োজিত নিয়মিত ওয়েবিনারের একটি পর্ব ছিল প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার নিয়ে। সেখানে বক্তা ছিলেন থেরাপের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) মোজাহেদুল হক আবুল হাসনাত (মাসুম)। থেরাপ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে সেই ওয়েবিনার থেকে টেক্সটে রূপান্তর করে আমার ব্লগের পাঠকদের জন্য পোস্ট করলাম।
আমার মতে একজন ছাত্রের জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ
প্রথম হচ্ছে, তুমি যদি প্রোগ্রামার হতে চাও, তাহলে প্রোগ্রামিং করতে হবে। প্রোগ্রামার হতে চাই, এই স্বপ্ন নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, ছাত্র অবস্থাতেই তোমার প্রোগ্রামিং করতে হবে।
প্রোগ্রামিংটা হচ্ছে অনেকটা খেলাধুলার মত। যেমন ফুটবল, তুমি যদি সারাদিন ম্যারাডোনা বা পেলের জীবনী পড় তবে তুমি ভাল খেলোয়াড় হতে পারবে না। আবার এটাও ঠিক যে ফুটবল কিভাবে খেলে সেটা বই পড়ে বা কারো কাছ থেকে জানতে হবে, কিন্তু ভালো খেলোয়াড় হতে হলে তোমাকে ফুটবল খেলতে হবে। খেলতে খেলতেই তুমি খেলোয়াড় হতে পারবে। প্রোগ্রামিংও ঠিক সেইরকম, কম্পিউটার সায়েন্স যারা পড়ছ তারা কিন্তু জান যে কিভাবে প্রোগ্রামিং করতে হয় কিন্তু প্রোগ্রামার হতে হলে তোমাকে অবশ্যই প্রোগ্রামিং করতে হবে। তোমরা যদি চিন্তা করো যে তোমরা পড়াশুনা শেষ করে প্রোগ্রামিং করবা, তবে আমার মনে হয় তোমার অনেক দেরি করে ফেলেছ যদি যারা আগে থেকেই প্রোগ্রামিং করে তাদের সাথে তুলনা করা হয়। বাংলাদেশের মত জায়গায় যেখানে আইটি ইন্ডাস্ট্রি খুব ছোট, সেখানে সব কোম্পানিগুলো চায় যে ছাত্ররা বের হবে এবং তারা ইতিমধ্যে প্রোগ্রামিং জেনে থাকবে। প্রায় সব কোম্পানিই চায়, প্রোগ্রামিং জানা কেউ একজন আসবে। প্রোগ্রামিং শিখতে সময় লাগে। একজন ভালো প্রোগ্রামার হতে প্রায় ২/৩ বছর লেগে যায়। খুব ভালো হলে এবং খুব ভালো ট্রেইনিং দিলেও কমপক্ষে ১ বছর সময় লাগে একজন মোটামুটি মানের প্রোগ্রামার বানাতে। কাজেই এটার জন্য যদি কোম্পানিকে বিনিয়োগ করতে হয়, তবে বাংলাদেশের মত কোম্পানিগুলো জন্য এটা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। কাজেই আমি বলব, যারা সিএস বা কাছাকাছি ফিল্ডে ঢুকেছ, যারা প্রোগ্রামার হতে চাও, অবশ্যই প্রোগ্রামিং করতে হবে। আর ক্লাসে যেসব প্রোজেক্ট দেয়, ওইগুলো যথেষ্ট না। ক্লাসের প্রোজেক্টগুলো খুব সহজ হয়। তাই আরও ভাল ভাল প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করতে হবে। এক কথায় প্রচুর প্রোগ্রামিং করতে হবে। একা একা করার চেয়ে বন্ধুদেরকে নিয়ে করাটা আমি ভাল মনে করি। ছাত্র অবস্থাটা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়টা যদি সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে পরে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তোমার আশেপাশের মানুষকে সাহায্য করার জন্য সফটওয়্যার বানাতে পার। পড়াশুনার ব্যাপারে বলব, বেশির বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস বেশ ভালো এবং বিশ্বমানের, কারণ বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস কিন্তু বাইরের কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে তৈরি করা। সিলেবাসের কন্টেন্টটা ভালো, সীমাবদ্ধতা হচ্ছে পড়ানোর পদ্ধতিতে। হয়তো শিক্ষকরা যতটুকু আপ টু ডেট থাকা উচিৎ সেইরকম না। অনেকেই পড়ে শুধু জিপিএ পাওয়ার জন্য, এটা আমার মতে ভুল হবে। বিশেষ করে মূল সাবজেক্টগুলো যখন পড়ছ তখন মন দিয়ে পড়বে। তাতে যেমন জিপিএ চলে আসবে তেমনি তুমি প্রোগ্রামার বা ডাটাবেজ অ্যাডমিনিসট্রেটর হওয়ার লক্ষে এগিয়ে যেতে পারবা। শুধু যদি জিপিএর জন্য পড় তাহলে ওইটা হবে না।
কমিনিউকেশন স্কিলস
যেকোনো প্রোগ্রামারকে, টেস্টারকে কমিনিউকেশন স্কিলে ভাল হতে হবে। ধর, তোমার মাথায় একটা ডিজাইন আছে কিন্তু তুমি যদি এটা ব্যাখ্যা করতে না পার, তখন হয়তো তুমি নিজে নিজে সফটওয়্যারটা তৈরি করতে পারবে, কিন্তু যখন তুমি এটা কিনে কাজ করবে তখন সমস্যা হবে। এই কমিনিউকেশন স্কিলটা আমাদের বেশ অভাব আছে, আমাদের ছাত্রদের।
ইংলিশ
আমাদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজে কলমে শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে ইংলিশ। কিন্তু বেশির ছাত্রদেরকে আমরা দেখি, যাদের ইংলিশের অবস্থা খুবই খারাপ। সবাই ১২ বছর ধরে ইংরেজি পড়ে এসেছে, কিন্তু ইংরেজিতে আসলে তেমন কমিউনিকেট করে না। কাজেই ইংরেজিতে ভালো করতে হবে। অনেক সময় মন দিয়ে ইংলিশ মুভি দেখলেও ইংরেজি শেখা যায়।
প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন
এটা সত্য যে, আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে কি করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আপ টু ডেট থাকা আইটি ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে। বাংলাতে অনেক আইটি ম্যাগাজিন আছে, এগুলো পড়েও আইটি ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকা যায়। পাশাপাশি অনেক ওয়েবসাইট আছে, ওগুলোতেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তোমার শিক্ষককে অনুরোধ করো যেন কোন সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে লোকজন এনে কোন ক্লাসে অংশগ্রহন করতে, অথবা ক্লাস নিতে। কারণ, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইন্ডাস্ট্রিতে কী হয়, এই ব্যাপারে আপ টু ডেট না বা বর্তমানে কী হয়, ওইটা সম্পর্কে হয়তো অতটা সচেতন না। কিছু কোর্স যেমন, সফটওয়্যার, সিস্টেম এনালাইসিস এসব কোর্সে যদি ইন্ডাস্ট্রি থেকে লোকজন এনে লেকচার দেয়ানো যায়, তবে সেটা অনেক উপকারি হবে। দেশের বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত তোমাদের সিনিয়র ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখ এবং বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে আলাপ আলোচনা করো।
সফটওয়্যার টেস্টিং
প্রোগ্রামার যারা, তারা সফটওয়্যার তৈরি করবে এবং তৈরি করার পর (খুব ছোট সফটওয়্যার না হলে) সেই সফটওয়্যারে অনেক বাগ থাকে, সমস্যা থাকে, অন্যান্য ইস্যু থাকে। গ্রাহককে সফটওয়্যার দেওয়ার আগে এগুলো টেস্ট করে বাগগুলো দূর করতে হয় এবং তারপর গ্রাহককে দিতে হয়। তাই প্রায় যেকোনো সফটওয়্যার কোম্পানিতে সফটওয়্যার টেস্টারদের প্রয়োজন। তুমি যে কমার্শিয়াল সফটওয়্যার দেখ বা ব্যবহার কর, এটা অবশ্যই টেস্টিং হয়ে এসেছে। কাজেই যেই পরিমান প্রোগ্রামার প্রয়োজন প্রায় সেই পরিমান টেস্টারও প্রয়োজন।
অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, সফটওয়্যার টেস্টার হতে হলে প্রাগ্রামিং জানতে হবে না বা অনেকের যাদের প্রোগ্রামিং ভালো লাগে না, তারা হয়ত ভাবে আমি সফটওয়্যার টেস্টার হব। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো টেস্টারদের প্রোগ্রামিং জানতে হয় না, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টেস্টারদের প্রোগ্রামারদের মত অত প্রোগ্রামিং না জানলেও বেসিক কিছু প্রোগ্রামিং জানতেই হবে। অনেক টেস্টিংই করতে হয় বিভিন্ন অটোমেশন টুলের মাধ্যমে। টেস্টিংএ দুইটা জনপ্রিয় অটোমেশন টুল হচ্ছে রুবি আর পাইথন। অনেক ফ্রেমওয়ার্ক আছে, কিন্তু বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের নাম বললাম। কাজেই যারা টেস্টার হতে চাও, তারা যদি রুবি বা পাইথন শিখো তবে এটা অনেক উপকারি হবে। সফটওয়্যার ডেভেলপারদের মত সফটওয়্যার টেস্টারও পরবর্তীতে বিভিন্ন ফিল্ডে যেতে পারে। যেমন, শুরু করতে পারে টেস্টিং ক্যারিয়ার দিয়ে এবং তারপরে বিজনেস এনালিস্ট হতে পারে, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টে যেতে পারে, সফটওয়্যার লিড ম্যানেজমেন্টে যেতে পারে।
ডাটাবেজ
ডাটাবেজের প্রধান দুটি ট্র্যাক হচ্ছে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিসট্রেশন আরেকটা হচ্ছে প্রোগ্রামিং এবং আরও বেশ কিছু ছোট ছোট ট্র্যাক আছে। ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্র্যাসনে প্রধানত ডাটাবেজ ম্যানেজ করতে হয়। বেসিক্যালি ডাটাবেজ প্রোগ্রামাররা, প্রোগ্রামারদের সাথে খুব ক্লোজলি কাজ করে। আরেকটা জিনিস যেটা আমাদের ছাত্র অনেকই জানে না যে, ডাটা এনালাইটিকস একটা সম্ভাবনাময় ফিল্ড। ফিল্ডটা আগে থেকেই ছিল, কিন্তু এখন খুব জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এটার চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে। ডাটা সাইন্স, ওয়ারহাউজিং এসবের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আর ডাটা একটু মজার এই কারণে যে, যারা সিএস পড়েছে, তাদের জন্য তো অবশ্যই এবং যারা পরিসংখ্যান পড়েছে, তাদের জন্যও ভালো একটা ক্যারিয়ার পাথ। কাজেই এখানে দুই ফিল্ড থেকেই লোক আসে, আইটি থেকেও আসে আবার পরিসংখ্যান ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেও লোকজন আসে। তবে দুইজন দুই রকমের কাজ করে হয়তো। যারা পরিসংখ্যান থেকে এসেছে তারা হয়ত ডিজাইন করে, আর যারা আইটি থেকে আসে তারা হয়ত ডাটা ওয়ারহাউজিং এর কাজ করে। তোমরা প্রচলিত ডাটাবেজগুলোর নাম জান, যেমন ওরাকল, এসকিউএল সার্ভার, মাইএসকিউএল, পোস্টগ্রেজএসকিউএল। তাই এগুলো নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু নতুন বলতে প্রায় ১০ বছর ধরে যেটার কথা বাংলাদেশের অনেকে হয়তো জানত না যে, নোএসকিউএল নামের এক ধরনের ডাটাবেজ আছে। এগুলো এসকিউএল ডাটাবেজ না। কিন্তু এগুলো এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বেশকিছু প্রোজেক্টে এগুলো খুব কার্যকরী। নতুন নতুন অনেক স্টার্টআপ তৈরি হচ্ছে, যারা এই নোএসকিউএল ডাটাবেজ ব্যবহার করে।
সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
সিস্টেম অ্যাডমিনিসট্রেশন সম্পর্কে অনেকে হয়তো জানে বেসিক্যালি অপারেটিং সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্র্যাট করতে হয়, মেশিন অ্যাডমিনিস্ট্র্যাট করতে হয়, ডাটা অ্যাডমিনিস্ট্র্যাট করতে হয়। এখানে বিশেষীকরণের সুযোগ থাকে, কেউ লিনাক্স সাইডে থাকে, কেউ উইন্ডোজ সাইডে যায়। ডেভঅপস হচ্ছে নতুন একটা ফিল্ড যেখানে ডেভেলপার আর অপারেশনাল কাজ হয়। এটা একটা সম্ভাবনাময় ফিল্ড। কেউ যদি ডেভঅপস হতে চায়, তবে তাকে প্রোগ্রামার হতে হবে আবার সিস্টেম অ্যাডমিনিসট্রেটরও হতে হবে। কিছুটা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিসট্রেশনও জানতে হবে। যারা সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেসনে আসতে চায়, তারা সিকিউরিটি নিয়েও কাজ করতে পার। বিভিন্ন কারণে আজকাল এটাও বেশ হট টপিক।
নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিসট্রেশন সম্পর্কে তেমন কিছু কাভার করছি না। নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিসট্রেশন মানে হচ্ছে নেটওয়ার্ক সেটআপ করানো। বাংলাদেশে বেশ কিন্তু কোম্পানি আছে যারা নেটওয়ার্ক ডিজাইন এবং প্লানিং করে দেয়। এখানেও সিকিউরিটি আছে।
এনালিস্ট
সিস্টেম এনালিস্ট এবং বিজনেস এনালিস্ট, এরা সব সময় সিএস থেকে আসে না, ননসিএস ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেও আসতে পারে, কিন্তু সিএস ব্যাকগ্রাউন্ড বা আইটি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসলে অবশ্যই সুবিধা বেশি হয়। একজন প্রোগ্রামার ৫/৭ বছর কাজ করার পর এনালিস্ট হতে পারে, আবার কেউ এনালিস্ট হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে। এনালিস্টের কাজ হচ্ছে, গ্রাহকদের সাথে কথা বলতে হয়, গ্রাহকের কি প্রয়োজন তা বুঝতে হয় এবং এটা সফটওয়্যার কোম্পানির উপর নির্ভর করে। যেসব কোম্পানি আউটসোর্সিং করে তাদের গ্রাহকের সত্যিকার প্রয়োজন বুঝে সেই সিস্টেমটা প্রোগ্রামারদের বুঝিয়ে দিতে হয়, অথবা কিছুটা ডিজাইন করে দিতে হয় যেন প্রোগ্রামাররা প্রোগ্রামটা তৈরি করতে পারে। আমাদের মত যেসব কোম্পানি যারা প্রোডাক্ট তৈরি করে এদের এখানে এনালিস্ট জবটা বেশ ইন্টারেস্টিং। এরা বিভিন্ন বিষয় এনালাইসিস করে বের করে কি প্রোডাক্ট হলে গ্রাহকের কাজ সহজ হবে। এই রোলটা হচ্ছে সবচেয়ে সৃজনশীল, প্রোগ্রামিংও সৃজনশীল। গ্রাহকের সব চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারপর ডেভেলপমেন্ট টিমকে কাজ বুঝিয়ে দেয়।
প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
এই ফিল্ডেও আইটি ও ননআইটি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে লোকজন আসে। কিন্তু আইটি থেকে আসলে আলাদা সুবিধা পাওয়া যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : থেরাপ সার্ভিসেস লিমিটেড কর্তৃক আয়োজিত নিয়মিত ওয়েবিনারের একটি পর্ব ছিল প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার নিয়ে। সেখানে বক্তা ছিলেন থেরাপের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) মোজাহেদুল হক আবুল হাসনাত (মাসুম)। থেরাপ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে সেই ওয়েবিনার থেকে টেক্সটে রূপান্তর করে আমার ব্লগের পাঠকদের জন্য পোস্ট করলাম।