স্মার্টফোনের জন্য ফেসবুক মেসেঞ্জারের স্বতন্ত্র ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে ফেসবুক। তাই বলে ভাববেন না যে ফেসবুক বন্ধুদের সাথে চ্যাট করা বন্ধ করে দিয়েছে। ফেসবুক কখনোই মেসেঞ্জারকে ফেসবুক থেকে বাদ দিবে না। বরং আজ থেকে messenger.com দিয়ে মেসেঞ্জারের জন্য নতুন ওয়েব ব্রাউজার ভার্সন চালু করেছে, যেখানে আপনি বন্ধুদের সাথে শুধুমাত্র চ্যাট করতে পারবেন। আপনি যদি নিউজ ফিড আপডেট বা বন্ধুদের প্রোফাইল দেখতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ফেসবুকের মূল ওয়েবসাইটে যেতে হবে । এই ফেসবুক মেসেঞ্জারের একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান (ম্যাসেজিং)। কেবল চালু হওয়া এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটি মোবাইল এবং ডেক্সটপে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ডেস্কটপে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এখানে আপনি ছবি, স্টিকার, সিগনেচার ইত্যাদি পাঠাতে পারলেও এখনো ডেস্কটপে কোনো ভয়েস ম্যাসেজ রেকর্ড বা পাঠানোর সুবিধা যোগ করা হয়নি। একটি মেন্যু সেটিংস রয়েছে যেটি দিয়ে আপনি সাউন্ড ইফেক্ট বন্ধ বা চালু করতে পারবেন। তবে আপনি যদি কাউকে ব্লক করতে চান বা গোপনীয়তা পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ফেসবুকের প্রধান ওয়েবসাইটে যেতে হবে। যদি আপনি শুধু মাত্র চ্যাট করতে চান তবে এটি আপনার জন্য একটি চমৎকার অ্যাপ।
সাল ১৮১৫। ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ। ইংল্যান্ডে সে সময় বড্ড শীত। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বায়রন পরিবারে জন্ম হলো এক শিশু সন্তানের। সেই শিশু সন্তানটি বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রন এবং অ্যানি ইসাবেলার কন্যা, অগাস্টা অ্যাডা; পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার-যিনি অ্যাডা লাভলেস নামেই সুপরিচিত।
অ্যাডা লাভলেস-প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার
পুরো নাম তাঁর অ্যাডা অগাস্টা কিং, আর ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। তাঁর বাবার সৎ-বোন অগাস্টা লেই এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাঁকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস যখন অ্যাডার বয়স, তখন থেকে তাঁর মা ইসাবেলা তাঁকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। পিতা বিখ্যাত রোমান্টিক কবি লর্ড বায়রনের সাথে অ্যাডার কখনো দেখা হয়নি। এমনকি ১৮৪১ সালের আগে অ্যাডা জানতেনই না লর্ড বায়রন তাঁর বাবা!
ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থতায় ভুগছিলেন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ছিল। ১৮২৯ সাল থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্থতায় ভুগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন তাঁকে। গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান তাঁর শিক্ষক ছিলেন। স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানি মাইকেল ফ্যারাডের সাথেও তাঁর জানাশোনা ছিল।
অ্যাডা লাভলেসের মায়ের একদমই ইচ্ছা ছিলনা তার মেয়ে বাবার প্রতিভা পাক। তাই ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে তিনি সঙ্গীতে এবং গণিতে ব্যস্ত করে রাখেন। মায়ের প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি – তাঁর গণিত প্রতিভা বিচ্ছুরিত হয়েছে উজ্জ্বল আলোকরশ্মির মত। ১৮৩২ সালে যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর, তখন তিনি ফ্লাইং মেশিনের নকশা প্রণয়ন করেন।
১৮৩৫ সালের ৮ জুলাই তিনি উইলিয়াম কিং এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর নামের সাথে কিং যুক্ত হয়। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তাঁর সাথে পরিচয় হয় বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের। স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ তখন তাঁর ডিফারেন্স মেশিন বা অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। ব্যাবেজকে তখন লোকজন পাগল মনে করতো। তাঁর এই অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের ধ্যানধারণা যেই গুটিকয়েক মানুষ বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অ্যাডা অন্যতম। অ্যাডা তাঁর গণিতবিষয়ক বিশ্লেষণী ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার ক্রাঞ্চিং এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে।চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন তাঁর Decline of Science in England বইয়ে। তখনকার দিনে এই যন্ত্রটির কাজ ব্যাখ্যা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল, এবং অনেক বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ তাঁর চিন্তাধারাটিকে সমর্থন করেন নি। কিন্তু অ্যাডা যন্ত্রটির কার্যপদ্ধতি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দেন। ব্যাবেজ অ্যাডার ধীশক্তি, সাবলীলতা, প্রতিভা এবং গাণিতিক দক্ষতায় মুগ্ধ ছিলেন। ব্যাবেজ অ্যাডা সম্পর্কে তাঁর লেখায় অ্যাডাকে সংখ্যার জাদুকরি (The Enchantress of Numbers) বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অ্যাডার মৃত্যুর ১০০ বছর পর অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন সম্পর্কে তাঁর একটি নোট প্রকাশিত হয়। সেই নোটের G-নং এ তিনি Bernoulli numbers এর একটি সিকোয়েন্স ক্যালকুলেশন করার জন্য একটি অ্যালগরিদম বর্ণনা করেন যা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবেই পরিচিত। অ্যানালিটিকাল মেশিন (যা বর্তমান কম্পিউটারের পূর্বপুরুষ)-এর মত এই নোটটি ছিল মেশিনটির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর বর্ণনা। আর এ কারণেই অ্যাডা অগাস্টা লাভলেস পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার হিসেবেই পরিচিত।
Bernoulli numbers এর ক্যালকুলেশন- পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম।
অ্যাডা তাঁর সারা জীবন ধরে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য কাজ করে গেছেন। ব্যাবেজ এর সাথে তাঁর বিখ্যাত কাজের পরও তিনি তাঁর অন্যান্য কাজগুলো চালিয়ে যান। তাঁর ইচ্ছা ছিল এমন একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করা যা দিয়ে স্নায়ু (Nerve) কিভাবে উদ্দীপ্ত হয় তা বের করা। অর্থাৎ তিনি নার্ভাস সিস্টেমের উপর একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল এবং ম্যাগনেটিজম এর উপর গবেষণা করেছেন।
এই টেক-জিনিয়াস ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর, মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা (US Defense) বিভাগের প্রমিত প্রোগ্রামিং ভাষার নাম রাখা হয় অ্যাডা (Ada)। Conceiving Ada নামে তাঁকে নিয়ে একটি সিনেমাও আছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে রয়েছে তাঁর ছবি। কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের কারণে ২৪ মার্চকে Ada Lovelace Day হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে।