২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ। ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে এয়ারবাস A320 বিমানে উড়াল দিলেন দুই পাইলট – ফার্স্ট অফিসার জেফরি স্কাইলেস ও ক্যাপ্টেন চেসলি সালেনবার্গার। উড্ডয়নের পরে আকাশে বড়সর পাখির আঘাতে বিমানের দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে গেল। তখন কাছাকাছি কোনো এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণের অবস্থা নেই, কারণ বিমান আর বেশিক্ষণ আকাশে উড়বে না। তাই পাইলটরা বিমানটি হাডসন নদীতে নামিয়ে দিলেন আর ভাগ্যক্রমে সকল যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেন। ক্যাপ্টেন সালেনবার্গার তখন জাতীয় বীরে পরিণত হলেন। যদিও তিনি খুব পরিষ্কারভাবেই বলেছিলেন যে ঠিক কী উপায় অবলম্বন করে তাঁরা সফলভাবে বিমানটি অবতরণ করালেন, কিন্তু মিডিয়ার আগ্রহ সেদিকে নয়। কী ছিল সেই জিনিস যা বিকল ইঞ্জিনের বিমানের যাত্রীদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল?

অনেক বছর আগের কথা। সেসময়ের কথা বলছি যখন মুনির হাসান সবগুলো বিভাগীয় গণিত উৎসবে যেতেন আর অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। সেবার গণিত উৎসবে বরিশাল গিয়েছি। তবে মুনির স্যার আসেন নি। তাই আমাদের নবী ভাই (ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ) অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। মঞ্চে মুনির স্যার যেই কাজের পর যেই কাজ করেন, নবী ভাইও সব কাজ একই ক্রমে করে যাচ্ছিলেন, কোনো নড়চড় নেই। আমি বেশ অবাক হলাম। তবে নবী ভাইয়া কিছুক্ষণ পরপর পকেট থেকে একটি কাগজ বের করে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন। সেখানে আছে একটা ছোট্ট তালিকা, কোন কাজটার পরে কোন কাজটা করতে হবে সেটি লেখা আছে। তখন আমার মনে পড়ল প্রোগ্রামিং কনটেস্টের কথা। সেখানে অনেক ভুল করতে করতে কিছু জিনিস শিখেছিলাম, যা দিয়ে আমি আমার টিমের জন্য একটি চেকলিস্ট বানিয়েছিলাম, যা কোনো সমাধান জমা দেওয়ার আগে আমরা ব্য়বহার করতাম। সেখানে কী ছিল এখন পরিষ্কারভাবে মনে নেই, তবে সেটা অনেকটা এরকম ছিল –
- প্রোগ্রাম কম্পাইল হচ্ছে?
- প্রোগ্রাম স্যাম্পল ইনপুটের জন্য সঠিক আউটপুট দিচ্ছে?
- আমরা কি সঠিক সমস্যাটির সমাধান জমা দিচ্ছি? (মানে প্রবলেম A-এর জায়গায় প্রবলেম B-এর সমাধান জমা দিয়ে ফেলছি না তো?)
সম্প্রতি আমি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সেইফটি কালচার (SafetyCulture) নামে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। যারা এই চেকলিস্টকে পুঁজি করেই বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। সেখানে যোগদানের প্রথম দিনেই দেখি আমার ডেস্কে আমার পড়ার জন্য একটি বই রাখা –

বইটি পড়লাম। ওপরের বিমান দুর্ঘটনার কথা ওই বইতেই জানলাম। বইয়ের লেখক যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক (সার্জন)। সেই সঙ্গে একজন বেস্টসেলার লেখকও বটে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত এই বইতে উনি লিখেছেন, কিভাবে চেকলিস্ট ব্যবহার করে অপারেশনের সময় জটিলতা ও মৃত্যু কমিয়ে আনা যায়। এজন্য উনাকে দীর্ঘ পরিশ্রম করতে হয়েছিল এবং WHO (World Health Organization)-এর সহায়তায় একটি পাইলট প্রকল্পের সমাপ্তির পরেই উনারা এই চেকলিস্টের সাফল্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
সুলিখিত ১৯৩ পৃ্ষ্ঠার বইটিতে লেখক বেশকিছু কৌতুহলোদ্দীপক ঘটনার উল্লেখ করেছেন, এয়ারবাস A320 এর কাহিনীও এই বইটি থেকেই নেওয়া। শল্যচিকিৎসায় চেকলিস্টের ব্যবহার বেশ নতুন হলেও স্থাপনা নির্মাণ কাজ ও উড়োজাহাজ পরিচালনায় চেকলিস্ট দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। আর সেই চেকলিস্টগুলোও নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়। হু-এর প্রকল্পে কাজ করার সময় অতুল তাই পরামর্শ করেছেন ডেনিয়েল বোরম্যানের সঙ্গে (বোয়িং বিমানের অনেক চেকলিস্ট যিনি বানিয়েছেন)। আবার বড় বড় বিল্ডিং তৈরির প্রকল্পও পরিদর্শন করেছেন। সেসবের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে বইটিতে।
চেকলিস্ট বিষয়টি যত সহজ, তবে মানুষকে দিয়ে এটি ব্যবহার করানোর ততটাই কঠিন। বইয়ের পরতে পরতে রয়েছে নানান ঘটনা, আর লেখকের অভিজ্ঞতার কথা। বইটি অ্যামাজন থেকে কিনে পড়া যাবে –