ক্লাউড কম্পিউটিং

এই লেখায় ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে।

সফটওয়্যারের জগতে ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing) একটি পরিচিত নাম। তবে প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, এর সঙ্গে ক্লাউড বা মেঘের কোনো সম্পর্ক নেই।

আমরা যখন কম্পিউটিং করি, তখন আমাদের দরকার হয় প্রথমত একটি কম্পিউটার। তারপর আমাদের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সেই কম্পিউটারে ইনস্টল করতে হয়। এখন ধরা যাক, আমি দ্বিমিক ওজে-র মতো একটি অনলাইন জাজ সফটওয়্যার তৈরি করলাম। এখন এই সফটওয়্যারটি একটি সার্ভার কম্পিউটারে ইনস্টল করতে হবে, যেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অনলাইন জাজ ব্যবহার করতে পারেন। শুরুতে কত জন মানুষ সেটি ব্যবহার করবে, এটি আমার জানা নেই। তাই স্বল্পমূল্যের বা কম কনফিগারেশনের একটি কম্পিউটারে সেটি ইনস্টল করলেই চলবে। তারপর একসময় দ্বিমিক অনলাইন জাজ বেশ জনপ্রিয় হলো, সাইটে অনেকগুলো প্রোগ্রামিং সমস্যা দেওয়া আছে, এবং ব্যবহারকারীও অনেক বেড়েছে। ব্যবহারকারী এত বেশি যে সাইট প্রায়ই অতিরিক্ত লোডের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমার এখন আরো ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটারে এটি ইনস্টল করা দরকার। তাই আমাকে আবার নতুন কম্পিউটার কিনতে হলো। আরো মাস ছয়েক পরে দেখা গেলো, বাংলাদেশের দশ লক্ষ শিক্ষার্থী এখানে নিয়মিত প্রবলেম সলভিং করছে। এখন আমার যেটা করা দরকার, আবার নতুন করে চার-পাঁচটি কম্পিউটার কিনে সেখানে সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেওয়া। আবার আমি ব্যবহারকারীদের ডেটা থেকে লক্ষ করছি, বছরে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি থাকে, তখন সবাই অনেক সমস্যার সমাধান সাইটে জমা দেয়। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সাইটে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম। তাহলে আমি যে দামী সব কম্পিউটার কিনে রেখেছি, সেগুলো সারা বছর একইভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। আবার একদিনের পরিসংখ্যান যদি দেখি, রাত তিনটার পরে সকাল সাতটা পর্যন্ত এটি তেমন ব্যবহার করা হয় না। সারাদিন মোটামুটি ব্যবহার হয়, আর রাত নয়টার পর থেকে দুইটা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। তার মানে, সারাদিনে আমার কম্পিউটারগুলো সমানভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমার হার্ডওয়্যার রিসোর্সের অপচয় হচ্ছে।

ওপরের সমস্যাটির সমাধান করার জন্য আমি যদি কম্পিউটার না কিনে, কোথাও কম্পিউটার ভাড়া করতে পারতাম এবং ব্যবহারের ওপর আমার বিল দিতে হতো, তাহলে কিন্তু খুব সুবিধা হতো। ক্লাউড কম্পিউটিং আমাদেরকে সেই সুবিধা দেয়। একটি ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা যতটুকু দরকার, ততটুকু হার্ডওয়্যার রিসোর্স কিনতে পারি এবং ব্যবহারের ধরণের ওপর ভিত্তি করে সেটি প্রয়োজনমতো বাড়ানো-কমানো যায়।

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মূল সুবিধা হচ্ছে, আমাদেরকে নিজেদের হার্ডওয়্যার কিনতে হয় না, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটি মেইনটেইন করার কাজটিও আমাদের করতে হয় না। বরং একটি ফি-এর বিনিময়ে ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কাজটি করে থাকে।

ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ হয় কীভাবে? ধরা যাক, কেউ এক হাজার কম্পিউটার কিনে রাখলো। এবং সেগুলো ক্লাউডের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করে রাখলো। এখন কম্পিউটারগুলোতে ভার্চুয়ালাইজেশন (virtualization)-এর মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা করা হয় যে, একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে একই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। একটি কম্পিউটারে যদি ৩২ গিটাবাইট মেমোরি থাকে, আর যদি আটজন ব্যবহারকারী থাকে যাদের প্রত্যেকের চার গিগা করে মেমোরি দরকার, তখন কিন্তু ওই আটজন ব্যবহারকারীকে একই কম্পিউটার থেকে সেবা প্রদান করা সম্ভব। আবার একজন যে সারাদিন একটি কম্পিউটার ব্যবহার করবে এমন নয়, বিভিন্ন সময়ে যদি বিভিন্ন জন ব্যবহার করে, তখন সেভাবে সময়ভিত্তিক সেবা দেওয়া সম্ভব। যেমন, একটি সার্ভারে যদি কম্পিউটার গেমস ও অফিস অ্যাপ্লিকেশন চলে, তখন দেখা যায়, রাতের বেলায় কম্পিউটার গেমস-এর ব্যবহার বেশি হয়, আর দিনের বেলায় অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বেশি হয়। এভাবে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলো রিসোর্স শেয়ার করতে পারে।

আবার কেবল হার্ডওয়্যার নয়, এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন সফটওয়্যার সেবাও গ্রহন করা সম্ভব। যেমন, আমি একটি ডেটাবেজ ক্লাউডের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারি এবং তাতে আমাকে ওই ডেটাবেজ সফটওয়্যার ইনস্টল করা, কনফিগার করা – এসব ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। যারা ক্লাউডের মাধ্যমে ডেটাবেজ সেবা দিচ্ছে, তারাই ওই কাজগুলো করে দিবে। আমি কয়টি ডেটাবেজ ব্যবহার করছি, ডেটাবেজে কতগুলো টেবিল আছে, বা টেবিলগুলোতে কী পরিমাণ ডেটা আছে – এসবের ওপর ভিত্তি করে আমাকে বিল পরিশোধ করতে হবে।

ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করতে পারে –

  • Infrastructure as a Service
  • Platform as a Service
  • Software as a Service

Infrastructure as a Service – এক্ষেত্রে মূলত বিভিন্ন হার্ডওয়্যারভিত্তিক সেবা প্রদান করা হয়। যেমন, প্রসেসিং ক্ষমতা, মেমোরি, হার্ড ডিস্ক, নেটওয়ার্ক – এসবের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনমত কনফিগারেশনের এক বা একাধিক কম্পিউটার ভাড়া নেওয়া যায়।

Platform as a Service – এখানে হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম, যেমন নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেওয়া হয়। ব্যবহারকারীকে নিজে থেকে সেসব সফটওয়্যার ইনস্টল ও কনফিগারেশনের ঝামেলায় যেতে হয় না।

Software as a Service – এখানে বিভিন্ন সফটওয়্যার ক্লাউডে ইনস্টল করে দেওয়া থাকে। ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে সেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং এজন্য নিয়মিত একটি ফি প্রদান করেন। যেমন মাইক্রোসফটের অফিস ৩৬৫। আবার গুগলের বিভিন্ন সেবা, যেমন সার্চ ইঞ্জিন, জিমেইল, গুগল ড্রাইভ ইত্যাদিও সফটওয়্যার এজ আ সার্ভিস বা সংক্ষেপে স্যাস (SaaS)-এর উদাহরণ। আবার বিভিন্ন ডেটাবেজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও এই মডেলে তাদের ডেটাবেজ ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে থাকে।

পৃথিবীতে অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্লাউডভিত্তিক সেবা প্রদান করে। তাদের মধ্য, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস, গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম, মাইক্রোসফট অ্যাজুর, আলি ক্লাউড ইত্যাদি জনপ্রিয়।

আশা করি, ক্লাউড কম্পিউটিং কী জিনিস, সেটির প্রাথমিক ধারণা পাঠকরা এই লেখা থেকেই পেয়ে যাব। নিচের ভিডিওতে এডব্লিউএস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে –

যোগফল শূন্য – প্রোগ্রামিং ইন্টারভিউ সমস্যা ৬

সমস্যাঃ একটি পূর্ণসংখ্যার অ্যারেতে তিনটি করে সংখ্যা নিলে কতগুলো পৃথক ত্রয়ী পাওয়া যায়, যাদের যোগফল শূন্য (0) হবে?

যেমন, A = [-1, 0, 1, 2, -1, -4], দেওয়া থাকলে, সমাধান হচ্ছে, (-1, 0, 1) ও (-1, -1, 2). প্রতিটি ত্রয়ীর সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রমে লিখতে হবে, মানে -1, 2, -1 লিখা যাবে না, বরং -1, -1, 2 লিখতে হবে।

সমাধানঃ সমস্যাটি খুব সহজেই তিনটি নেস্টেড লুপ ব্যবহার করে সমাধান করা যায়, সেক্ষেত্রে সমাধানের কমপ্লেক্সিট হয় O(n^3). ইন্টারভিউতে এই সমস্যা দিলে প্রথমেই এই কোড লেখা যাব না, বরং ইন্টারভিউয়ারকে জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইন্টারভিউয়ার এই সমাধানের কোড লিখে সময় নষ্ট করতে উৎসাহিত করবেন না, বরং কমপ্লেক্সিটি আরো কমাতে বলবেন।

আমরা যদি অ্যারেটি শুরুতেই সর্ট করে নিই, তাহলে সবচেয়ে ভেতরের লুপের বদলে বাইনারি সার্চ ব্যবহার করা যায়, এবং সেক্ষেত্রে কমপ্লেক্সিটি হয়, O(n^2 log n), যা O(n^3)-এর চেয়ে ভালো। কিন্তু সমস্যাটি O(n^2) কমপ্লেক্সিটিতেই সমাধান করা সম্ভব। আমি প্রথমেই বলব, পাঠককে একটু নিজে চেষ্টা করার জন্য। নিজে চেষ্টা করে নিচের যেকোনো একটি লিঙ্কে সমাধান করে যাচাই করা যাবে –
https://www.interviewbit.com/problems/3-sum-zero/
https://leetcode.com/problems/3sum/description/

আমি একটি নমুনা ইনপুট ও আউটপুট দিয়ে দিচ্ছি –

ইনপুট – A = [ 1, -4, 0, 0, 5, -5, 1, 0, -2, 4, -4, 1, -1, -4, 3, 4, -1, -1, -3]

আউটপুট – [[-5, 0, 5], [-5, 1, 4], [-4, -1, 5], [-4, 0, 4], [-4, 1, 3], [-3, -2, 5], [-3, -1, 4], [-3, 0, 3], [-2, -1, 3], [-2, 1, 1], [-1, 0, 1], [0, 0, 0]]

সমস্যাটি আমি আজকে সন্ধ্যায় সমাধান করেছি (আমি পাইথন ব্যবহার করেছি), কিন্তু পুরো সমাধান লিখে দিয়ে পাঠককে প্রোগ্রামিংয়ের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছি না।

উল্লেখ্য যে, এই প্রশ্নটি গুগল ও ফেসবুকের ইন্টারভিউতে ইতিপূর্বে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে।

ল্যারি পেজ – গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা

“গুগল”আজকের এই যুগে সবার কাছে অতি প্রয়োজনীয় এবং পরিচিত একটি নাম।  যেটির শুরু হয়েছিল একজনের ব্যক্তিগত গ্যারেজ থেকে। তথ্য খোঁজার ব্যাপারে সে একজন জিনিয়াস। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ সম্পর্কে।  

লরেন্স ল্যারি পেজ ১৯৭৩ সালের ২৬ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের ইষ্ট ল্যান্সিং এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কার্ল ভিনসেন্ট পেজ এবং মা গ্লোরিয়া পেজ দুইজনেই ছিলেন মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক। যদিও ল্যারির মা গ্লোরিয়া একজন ইহুদি ছিলেন, কিন্তু ছোটবেলা থেকে তিনি ল্যারিকে কোন ধর্মীয় মতবাদের গড়ে উঠার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেননি।

কম্পিউটার বিজ্ঞানী বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে ল্যারি পেইজ বড় হচ্ছিলেন বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও প্রযুক্তি ঘেরা পরিবেশে । ল্যারি তাঁর ছোটবেলা সম্পর্কে বলেন, “আমাদের বাসায় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং টেকনোলজিক্যাল বইয়ের ছড়াছড়ি ছিলো। ছোটবেলায় আমি সেসব নিয়ে মগ্ন থাকতাম। ১২ বছর বয়সেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমি একটি প্রতিষ্ঠান করতে যাচ্ছি।”

কম্পিউটারের উপর ল্যারির প্রথম আগ্রহ জন্মে যখন তাঁর বয়স মাত্র ৬ বছর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া প্রথম শিশু হিসেবে তিনি ওয়ার্ড প্রসেসিং ব্যবহার করে একটি এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেন। বড় ভাইয়ের উৎসাহে তিনি  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেনঃ “খুব ছোটবেলায় আমি বুঝতে পারি আমার আবিষ্কারের একটা নেশা রয়েছে। সেই থেকে আমি প্রযুক্তি এবং ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠি।”

ল্যারি ওকেমস মন্টেসরী রেডমুর স্কুলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ইষ্ট ল্যান্সিং হাই স্কুলে ভর্তি হন । সেখান থেকে ১৯৯১ সালে পাশ করার পর তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি লেগো দিয়ে একটি ইঞ্জেক্ট প্রিন্টার তৈরি করেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ল্যারি স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ১৯৯৩ সালে তিনি সৌর গাড়ি নির্মান গবেষণার সদস্য হন।

তরুণ ল্যারি
তরুণ ল্যারি

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। বসন্তকালীন পিএইচডি অরিয়েন্টেশনের সময় সার্জে ব্রিনের সাথে ল্যারি পেজের দেখা হয়। তখন থেকেই তাঁরা বন্ধু হয়ে যান। দুই বন্ধু মিলে পেজ র‌্যাংক অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি করার সময় তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের গানিতিক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের বিশাল লিংক ভান্ডার এবং কনটেন্ট নিয়ে তিনি এবং সার্গেই ব্রিন গবেষণা প্রোজেক্ট করেন, যার নাম দেন ব্যাকরাব (BackRub)।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ প্রজেক্ট হিসেবে দুই বন্ধু ল্যারি এবং সার্গেই একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন, যেটির কাজ ছিলো জনপ্রিয় পেজগুলোর তালিকা করে সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজের তথ্যকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা। সার্চ ইঞ্জিনটির কাজ শুরু হয় ল্যারি এবং সার্গেই-এর এক সহপাঠীর গ্যারেজে। এই সার্চ ইঞ্জিনটির নাম তাঁরা দেন “গুগল”। ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর Google.com  নামে একটি ডোমেইন তাঁরা নিবন্ধন করেন।

images (1)
ল্যারি পেজ এবং সার্জেই ব্রিন -দুই বন্ধু

সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করলেও নতুন একটি কোম্পানি খোলার মত টাকা দুই বন্ধুর কাছে ছিলো না । এবার দুই বন্ধু নেমে গেলের অর্থ যোগানের কাজে। সেইসময় দুই বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম। কোম্পানি হওয়ার আগেই তিনি পেজ আর ব্রিনকে এক লাখ ডলার দেন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যোগার করলেন ১ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ দিয়েই ল্যারি পেজ সার্জে ব্রিন ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “গুগল ইনকর্পোরেট”। এই সময় তারা ৬০ মিলিয়ন পেজ ইনডেক্স করে ফেলেন। আর গুগলের সার্চ রেজাল্ট ঐ সময়ের সার্চ ইঞ্জিনগুলোর চেয়ে ভাল অবস্থান করে ফেলে। সেই থেকে গুগল হয়ে উঠে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। শুরুটা গ্যারেজে হলেও দুই বছরের মাথাতেই ল্যারি পেইজ ‍ও সার্জেই ব্রিন তাদের কোম্পানী স্থানান্তর করে নিয়ে যান ১৬৫ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ- পালো আল্টো তে।  তিন বছরের মাথায় গুগলের প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে!

ল্যারি পেইজ ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর লুসিন্ডা সাউথওয়ার্থকে বিয়ে করেন। বর্তমানে ল্যারি পেইজ এক সন্তানের জনক।

২০শে জানুয়ারি, ২০১১ সালে পেইজকে গুগলের প্রধান নির্বাহী ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তিনি ৪ঠা এপ্রিল, ২০১১ থেকে দায়িত্ব পালন করেন। গুগল এর নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গুগলের  ল্যারি পেইজ বার্ষিক ১.২৫ মিলিয়ন ডলার বেতন পান।

বর্তমানে ল্যারি পেইজ ভোকাল-কর্ড প্যারালাইসিস এ আক্রান্ত। এটি তার কণ্ঠ ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে, তবে প্রাত্যহিক কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে না। ১৪ বছর আগে খুব খারাপভাবে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার একটি ভোকাল কর্ড প্যারালাইজড হয়ে যায় এবং ডাক্তার এর কোন কারণ খুঁজে না পাওয়ায় তার গলার স্বর এখন  পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তই থেকে গেছে।

ফরচুন সাময়িকীর চোখে ২০১৪ সালের বর্ষসেরা ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব (বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার) নির্বাচিত হয়েছেন গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ। এছাড়া ২০১১ সালে পেজ  ইউ এস সাময়িকী ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের ১১তম সেরা ধনী ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হন।

গুগল এর ৭টি ব্যর্থ প্রোডাক্ট

মূলত সার্চ ইঞ্জিন হলেও এখন পর্যন্ত অনেক প্রোডাক্ট তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত কোম্পানী গুগল। তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রোডাক্ট তারা বন্ধও করে দিয়েছে। সেসব প্রোডাক্টগুলোর কয়েকটি নিয়ে এই লেখা।

১। গুগল হেল্পআউটসঃ
গুগল হেল্পআউটস হচ্ছে গুগলের একটি সহযোগী সেবা যার মাধ্যমে সরাসরি ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য নেওয়া যায়। গুগল হেল্পআউটসের মাধ্যমে মিউজিক, কম্পিউটার, রান্নাবান্না, শিক্ষা, ফ্যাশন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর সাহায্য পাওয়া যায়। গুগল হেল্পআউটস সেবা নিতে হলে ব্যবহারকারীদের গুগলকে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হত।

Google-helpoutsচালু হয়ঃ গুগল হেল্পআউটস ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে চালু হয়।

বন্ধ হয়ঃ ১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫তে গুগল অফিসিয়ালি ঘোষণা করে যে ২০ই এপ্রিল ২০১৫ গুগল হেল্পআউটস বন্ধ করে দিবে।

বন্ধ হওয়ার কারণঃ যেহেতু হেল্পআউটস পেইড ছিল, আর একই ধরণের সেবা ইউটিউবে ফ্রি পাওয়া যেত। এটাই হয়ত গুগল হেল্পআউটস বন্ধ হওয়ার কারণ ছিল।

Google_Glass_with_frame
২। গুগল গ্লাসঃ
গুগল গ্লাস হচ্ছে অপটিক্যাল হেড-মাউন্টেড ডিসপ্লে (OHMD) সমৃদ্ধ এক ধরণের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি। নাম দেখেই বোঝা যায়, এটার ডেভেলপারও গুগল। গুগল গ্লাস এক ধরণের পরিধানযোগ্য কম্পিউটারও বটে। এটার অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে আন্ড্রয়েড। ডুয়াল কোর  প্রসেসর, ২ জিবি র‍্যাম, ১৬ স্টোরেজ , ৫এমপি’র ছবি এবং ৭২০পি’র ভিডিও, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, মাইক্রো ইউএসবি সবই আছে।

চালু হয়ঃ সীমিত সময়ের জন্য আমেরিকাতে ১৫ই এপ্রিল ২০১৩ তে ১৫০০ ডলারে প্রথম গুগল গ্লাস বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ই মে ২০১৪তে একই দামে আমেরিকাতে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বন্ধ হয়ঃ ১৫ই জানুয়ারী ২০১৫তে গুগল ঘোষণা করে যে তারা আর গুগল গ্লাস তৈরি করবে না।

বন্ধ হওয়ার কারণঃ নতুন করে উৎপাদন বন্ধ রেখে তারা গুগল গ্লাসের ডেভেলপমেন্টের কাজ করতেছে। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে গুগল গ্লাস আবার চালু হতে পারে।
google-wave-logo৩। গুগল ওয়েভঃ
গুগল ওয়েভ যা অ্যাপাচি ওয়েভ নামেও পরিচিত। গুগল ওয়েভ হচ্ছে একটি ওয়েব ভিত্তিক কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম এবং কমিউনিকেশন প্রোটোকল যা ডিজাইন করা হয়েছিলো ই-মেইল, ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং, উইকিস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর মত মাধ্যম গুলোকে একত্র করার জন্য।

চালু হয়ঃ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে শুধুমাত্র ডেভেলপারদের জন্য গুগল ওয়েভ রিলিজ করা হয়। এরপর ১৯ মে ২০১০ সালে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

বন্ধ হয়ঃ ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে গুগল ওয়েভ বন্ধ হয়ে যায়।

বন্ধ করার কারণঃ ব্যবহারকারী স্বল্পতার কারণে গুগল ওয়েভ বন্ধ করা হয়।

৪। গুগল নলঃ
নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর লিখিত আর্টিকেলের উপর ভিত্তি করে ২৩ জুলাই ২০০৮ সালে গুগল নল প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন প্রায় হাজার খানেক আর্টিকেল ছিল যার বেশির ভাগই ছিল স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা বিষয়ক। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন উইকিপিডিয়া’র সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য গুগল নলের উদ্ভব হয়।

Knol-logoচালু হয়ঃ ১৩ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে ঘোষণা করা হলেও ২৩ জুলাই ২০০৮ সালে গুগল নল উন্মুক্ত করা হয়।

বন্ধ হয়ঃ ৩০ এপ্রিল ২০১২ সালে গুগল নল বন্ধ করা হয়।

বন্ধ করার কারণঃ মূলত একই রকম আর একটা সেবা “অ্যানোটাম” এর ডেভেলপ করার জন্যই গুগল নল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
orkut-byGoogle-logo
৫। অরকুটঃ
অরকুট ছিল গুগলের একটি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট। এটা মূলত ব্যবহারকারীদের নতুন পুরাতন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ডিজাইন করা হয়। অরকুটের স্রষ্টা অরকুট বুয়ুকোকটেন এর নাম অনুসারে এটার নামকরণ করা হয়, যিনি গুগলের একজন কর্মী ছিলেন। ভারত এবং ব্রাজিলের ২০০৮ সালের সব চেয়ে বেশি ভিজিটেড সাইটের মধ্যে অরকুট ছিল।

চালু হয়ঃ ২৪ জানুয়ারী ২০০৪ সালে অরকুট চালু হয়।

বন্ধ হয়ঃ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে অরকুট বন্ধ হয়।

Google_Buzz_logo_new৬। গুগল বাজঃ
গুগল বাজ ছিল গুগলের সামাজিক যোগাযোগ, মাইক্রোব্লগিং এবং ম্যাসেজিং টুল যা জিমেইল এর সাথে ইন্টিগ্রেটেড অবস্থায় ছিল। গুগল বাজ এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন লিঙ্কস, ফটো, ভিডিও ইত্যাদি শেয়ার করতে পারত। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন যে, সামাজিক যোগাযোগের সাইট “ ফেসবুক” এবং মাইক্রোব্লগিং সাইট “টুইটার” এর সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য গুগল বাজের জন্ম।

চালু হয়ঃ ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১০ সালে গুগল বাজ চালু হয়।

বন্ধ হয়ঃ ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ সালে গুগল বাজ বন্ধ হয়।

বন্ধ হওয়ার কারণঃ গুগল বাজ বন্ধ করে পরবর্তীতে গুগল প্লাস এ স্থানান্তর করা হয়।
480px-Google_Reader_logo৭। গুগল রিডারঃ
গুগল রিডার ছিল গুগলের একটি আরএসএস/এটম ফিড এগ্রেগেটর। (ফিড এগ্রেগেটর হচ্ছে একটি ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান যা অনলাইন পত্রিকা, ব্লগস, পডকাস্টস এবং ভিডিও ব্লগ গুলোকে সহজে দেখানোর জন্য এক জায়গায় একত্র করে রাখে।) গুগলের ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস ওয়েদেরেল গুগল রিডার তৈরি করেছিল।

চালু হয়ঃ ৭ অক্টোবর ২০০৫ সালে গুগল রিডার চালু হয়।

বন্ধ হয়ঃ ১ জুলাই ২০১৩ সালে গুগল রিডার বন্ধ হয়।

বন্ধ হওয়ার কারণঃ মূলত ব্যবহারকারী কমে যাওয়ার কারণেই গুগল রিডার বন্ধ করা হয়।

লেখক : ইমরান হোসেন।

গুগল ডোমেইন

বিশ্বখ্যাত টেক কোম্পানী গুগল তাদের সার্ভিসগুলোর মধ্যে একটি নতুন সেবা যোগ করল, সেটি হচ্ছে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস। বর্তমানে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও খুব দ্রুত এই সার্ভিস বিশ্বের অন্যান্য দেশেও চালু হবে। শুরুতে প্রতিবছরের জন্য ১২ ডলার করে দিতে হবে । গুগল আপনাকে একটা ডোমেইন নামের সাথে ব্যক্তিগত নিবন্ধন, ফ্রি জিমেইল থেকে ইমেইল ফরওয়ার্ড করা, প্রায় ১০০টির তম সাব-ডোমেইনের জন্য সাপোর্ট নিশ্চিত করবে ।

ইতিমধ্যে গুগল কিছু কোম্পানিকে নিজেদের অংশভুক্ত করেছে যেন ব্যবহারকারীদেরকে দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরি করতে সাহায্য করা যায়। যেমন : Squrespace, Weebly, Wix, তবে এদের সেবা নিতে হলে আপনাকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। গুগল ঘোষণা করেছে যে, Blogger ব্যবহারকারীরাও নিজস্ব ডোমেইনে ব্লগার ব্যবহার করতে পারবে ।

গুগল আরও কিছু নতুন সুবিধা যোগ করছে, যেমনঃ ডোমেইন পরিচালনা করার জন্য সহজ ড্যাশবোর্ড, ওয়েবসাইট এবং ইমেইল সেটিংস, উন্নত সার্চ এবং সাজেশন, ডাইনামিক DNS ইন্টিগ্রেশন এবং প্রায় ৬০টি নতুন ডোমেইন Ending।

গুগলের এই সার্ভিসটি বর্তমানে বেটা হিসেবে আছে। গত বছরের জুন মাসে পরীক্ষামূলকভাবে অল্প কিছু ব্যবহারকারীর জন্য গুগল সার্ভসটি চালু করে। বর্তমান সার্ভিসের বেশির ভাগ উন্নয়ন করা হয়েছে আগেকার টেস্টারদের পরামর্শের উপর নির্ভর করে। ধারণা করা হচ্ছে GoDaddy সহ অন্যান্য শীর্ষ ডোমেইন বিক্রেতারা এবার বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেই পড়তে যাচ্ছে।

বিস্তারিত জানা যাবে এখানে : https://domains.google.com/about/

– ইমরান হোসেন।

অনুষ্ঠিত হল গুগল আই/ও ২০১৪

DSC_3200

গুগল আই/ও মূলত ডেভেলপারদের কনফারেন্স হিসেবে পরিচিত হলেও এর প্রতি সাড়া বিশ্বের মানুষেরই নানা কারনে আগ্রহ হয়ে থাকে। আর গুগলের ২০১৪ সালের আই/ও তার ব্যাতিক্রম নয়। আর এবারের মূল আকর্ষণ তৈরি করেছিল অ্যান্ড্রয়েডের ‘এল’ আদ্যক্ষরের নতুন সংস্করণ, এইচটিসি নেক্সাস, নেক্সাস সিরিজের বাদ যাওয়া, গুগলের নতুন অ্যান্ড্রয়েড সিলভার প্রোগ্রাম এবং গুগল অ্যান্ড্রয়েড টিভির মতন নানা গুজব। কতটুকু সত্যতা পেয়েছে এ গুজবগুলো? সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করতেই এই প্রবন্ধটি-

DSC_3210

কিছু পরিসংখ্যান
গুগলের ইভেন্টের সূচনা করে অ্যান্ড্রয়েড, ক্রোম এবং অ্যাপসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুন্দর পিচাই এর বক্তব্য দিয়ে। তিনি তার বক্তব্যে প্রকাশ করেন কিভাবে করে অ্যান্ড্রয়েড এবং গুগলের অন্যান্য সার্ভিসেস প্রভাব ফেলেছে বিগত বছরে। তাঁর বক্তব্য থেকে উঠে আসে স্মার্টফোন কত প্রকটভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলা শুরু করেছে। শুধুমাত্র গত বছরের শেষ প্রান্তিকেই স্মার্টফোন বাজারজাত করা হয়েছে ৩১৫ মিলিয়ন। আর এর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েডের মাস হিসেবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ বিলিয়নের উপরে। এছাড়া ট্যাবলেট মার্কেটেও আন্ড্রয়েডের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষ হিসেব অনুযায়ী ট্যাবলেট মার্কেটের ৪৬ শতাংশ শেয়ার এখনও আন্ড্রয়েড এর দখলে। আর অ্যাপ ইন্সটলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এসকল ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রায় ২৩৬ শতাংশ।

DSC_3247

অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান
এ সকল পরিসংখ্যান শেষ সুন্দর পিচাই ঘোষণা করেন তাদের নতুন আন্ড্রয়েড ওয়ান প্রোগ্রামের। যা মূলত উন্নয়নশীল বাজারগুলোকে কেন্দ্র করে কাজ করবে। এ জন্যে তারা পার্টনার হিসেবে নির্বাচন করেছে মাইক্রোম্যাক্স, স্পাইস এবং কার্বন ফোনকে। তাদের তৈরি করা ফোন সাড়া বিশ্বে বাজারজাত করা হবে। সুন্দর পিচাই উদাহরণ স্বরূপ মাইক্রোম্যাক্সের একটি ফোন দেখায় যে কিনা ডুয়াল সিম, ৪.৫ ইঞ্চি স্ক্রিন এবং এফএম রেডিও আছে। এর দাম হবে ১০০ ডলারের নিচে। এ সকল ফোন অ্যান্ড্রয়েডের গুগল সিরিজের মতনই সরাসরি গুগলের কাছ থেকে আপডেট পাবে এবং আন্ড্রয়েডের সকল সুবিধা এতে বিদ্যমান থাকবে।

DSC_3258

আন্ড্রয়েড এল ডেভেলপার প্রিভিউ
অতঃপর সুন্দর পিচাই ঘোষণা করেন তাদের নতুন অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণের। নতুন সংস্করণ হলেও এর নাম এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। গুগল থেকে বর্তমানে একে অ্যান্ড্রয়েড এল বলা হচ্ছে। এটি মূলত একটি ডেভেলপার প্রিভিউ হিসেবে কাজ করবে। গ্রাহক পর্যায়ে এখনই উন্মুক্ত করা হবে না। এর পিছনে কারন হল অ্যান্ড্রয়েড এল এ নানা ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে এর রানটাইম থেকে শুরু করে ইউজার ইন্টারফেস সবকিছুতে। ডেভেলপারকে এর সাথে তাদের অ্যাপ নিয়ে কাজ করতেই এই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের অ্যাপ ডিজাইন যেন সহজ হয় এর জন্যে আলাদা একটি ওয়েবসাইটও খুলেছে গুগল। বর্তমানে এই এল ডেভেলপার প্রিভিউ এর ফ্যাক্টরি ইমেজ শুধুমাত্র নেক্সাস ৫ এবং নেক্সাস ৭ ২০১৩ এডিশনের জন্যে পাওয়া যাবে। ফলে কেউ যদি ‘এল’ নিয়ে কাজ করতে চায় তাঁর এই ডিভাইস দুটির একটি থাকা লাগবে।

DSC_3661

অ্যান্ড্রয়েড ওয়েয়ার
প্রায় তিনমাস আগে গুগল প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ওয়েয়ার এর কথা ঘোষণা করলেও আজকে পুরোপুরি ভাবে উন্মোচন হল অ্যান্ড্রয়েড এর এই স্মার্টওয়াচ অপারেটিং সিস্টেম। আই/ও তে এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমুহ দেখান হয়েছে যদি এটি এখনও উন্নয়নে রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি গুগল দুটি স্মার্টওয়াচ ও ঘোষণা করেছে একটি এলজি জি ওয়াচ এবং আরেকটি স্যামসাং গ্যালাক্সি লাইভ। দুটোই অ্যান্ড্রয়েড ওয়েয়ার এ চালিত এবং এর মধ্যে এলজি জি ওয়াচ আগেই নানা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল। স্মার্টওয়াচ দুটির দাম যথাক্রমে ২৪৯ এবং ১৯৯ ডলার রাখা হয়েছে এবং আজকে থেকে এটি অর্ডার করা যাবে। তবে স্মার্টওয়াচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মটো ৩৬০ এখনই বাজারে আসবে না। গুগলের ভাষ্যমতে তা এ প্রান্তিকের শেষের দিকে বাজারজাত করা হবে।

DSC_3736

অ্যান্ড্রয়েড অটো
গুগল স্মার্টফোনের মতন গাড়ির ক্ষেত্রেও একটি সংঘঠন তৈরি করেছে বেশ কিছু মাস আগে। ওপেন অটোমোটিভ অ্যালায়েন্স এর উদ্দেশ্য হল গাড়ির ড্যাশবোর্ডকে আরও উন্নত করা। ড্রাইভারের কাছে আরও সহজ করে তোলা। আর এই উদ্দেশ্যে গুগল এই সংঘঠন প্রস্তুত করে। আর আজ গুগল ঘোষণা করল তাদের গাড়ির জন্যে তৈরি অ্যান্ড্রয়েড অটো। এটি গাড়ির ড্যাশবোর্ডের সাথে ড্রাইভারের অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে সংযুক্ত করে তাঁকে করবে আরও উন্নত এবং গাড়ি চালানোর সময় ফোনের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। গুগল আজ ঘোষণা করেছে তাদের এই অ্যালায়েন্সে আরও ৪০ টি প্রতিষ্ঠান যোগ দিয়েছে যা একটি বড় বিষয় বলেই দাবি করা যায়।

DSC_3826

অ্যান্ড্রয়েড টিভি
গুগলের টিভি বাজারে নতুন করে ঢোকার প্রচেষ্টা হল অ্যান্ড্রয়েড টিভি। এর মাধ্যমে গুগল যে কোন ডিভাইসের মাধ্যমে টিভিকে একটি অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে রুপান্তর করবে। যা কিনা ব্যবহারকারীর চাহিদা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে সক্ষম। এটি সম্পূর্ণ টিভিকে একটি এন্টারটেইনমেন্ট বক্স হিসেবে প্রস্তুত করে তুলবে। গুগলের ভাষ্যমতে তারা এর মাধ্যমে টিভিকে মোবাইল এবং ট্যাবলেটের সমান মনোযোগ দিচ্ছে। গুগল ঘোষণা করেছে ২০১৪ সালের সকল সনি স্মার্টটিভি এবং ২০১৫ সালের সকল শার্প স্মার্টটিভি এই অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে চলবে। এছাড়া আরও নানা টিভি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এতে যোগ দিবে খুব দ্রুতই।

DSC_3938

ক্রোমে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ
ক্রোমেও আসছে নানা পরিবর্তন। খুব শীঘ্রই ক্রোমে অ্যান্ড্রয়েডের সকল অ্যাপ সমর্থন করবে। ফলে গুগল সার্ভিস ব্যবহারকারী যেখানেই যাক না কেন সে তাঁর গুগলের সকল সার্ভিসেস খুব সহজেই পেতে পারবে।

এসকলের বাইরে গুগল আরও নানা সুবিধা এবং নতুন কার্যক্রম ঘোষণা করেছে যার মধ্যে আছে অ্যান্ড্রয়েড নতুন ডিজাইন, গুগল প্লে সার্ভিসেস, ড্রাইভ, নিরপত্তা, প্রজেক্ট ভোল্টা প্রভৃতি। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। তবে এত কিছুর মধ্যে গুগলের এই ইভেন্টে নতুন নেক্সাস ডিভাইস, সিলভার কার্যক্রম অথবা নেক্সাস সিরিজ বন্ধ হয়ে যাবার কোন ঘোষণা আসেনি। অবশ্য কোন নেক্সাস ডিভাইস ঘোষণা না হওয়ায় একটি বড় বিষয়। তবে সবমিলিয়ে গুগলের তিনঘন্টার এই কিনোট অনুষ্ঠান যথেষ্ট পরিমাণ উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমে পূর্ণ ছিল বলে দাবি করা যায়।