প্রযুক্তি বদলে দেয়া ১০ রূপকার

প্রযুক্তি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের রথযাত্রায় আমরা পেয়েছি স্মার্টফোন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আরো অনেক কিছু। এখন এই পরিবর্তনের ছোঁয়া শুধুমাত্র গ্যাজেটের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করে যাওয়া এই প্রযুক্তি জগত নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে বর্তমান যুগের প্রযুক্তিবিদদের। সম্প্রতি বিজনেস ইনসাইডার সাময়িকী এমন ১০ জন প্রযুক্তিবিদদের তালিকা প্রকাশ করেছে। জানবো তাদের সম্পর্কে।

জেফ ডিনঃ

গুগল এবং সার্চ এখন সমার্থক। কিন্তু, গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন ভবিষ্যতে রাজত্ব করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা বিভাগের একজন জোষ্ঠ্য কর্মী হিসেবে কাজ করছেন জেফ ডিন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্পকাহিনীকে বাস্তবে রূপদানকারীদের মধ্যে অন্যতম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর, ২০ বছরের পুরনো গুগলকে ডিন সমৃদ্ধ করেছেন নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে। সহকর্মীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় জেফ ডিন বর্তমানে কাজ করছেন কম্পিউটার ভিশন, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে। তবে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার বিষয়টি এক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখেন।

বর্তমানে গুগলের বেশ কিছু পণ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে জিমেইলের স্মার্ট কম্পোজ অপশন এবং ভয়েস এ্যানাবেল এসিষ্ট্যান্ট অন্যতম। বাস্তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর জগত অনেক বিস্তৃত, তাই বলা যায় এই জগতে ডিনের ভ্রমণ সবে শুরু। যেতে হবে বহুদূর।

কেটি ডিলঃ

রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান লিফট(Lyft) এর ডিজাইন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন কেটি ডিল। একটি সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাাপ কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে আসলে এটির কাজ করা উচিত এইসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে তিনি পছন্দ করেন। বর্তমানে শেয়ারিং ইকোনমিতে কেটি ডিলের রয়েছে অসামান্য অবদান। লিফটে জয়েন করার আগে তিনি চার বছর এয়ারবিএনবির(Airbnb) কাষ্টমার এক্সিপেরিয়েন্স ডিজাইন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ডিল মনে করেন কোন এ্যাপের ডিজাইন নিজের কম্পিউটারে দেখে “ওয়াও” বলা এক ধরণের অভিজ্ঞতা, আবার ঠিক অন্যদিকে গভীর রাতে ঝুম বৃষ্টিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই এ্যাপ ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা।

কেটি ডিল বলেন, “আমাদের এমন অনেক এ্যাপ আছে যেগুলো ইউজারদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তারা নিয়মিত সেটি ব্যবহার করলেও আমি নিজে ব্যবহার করি না। ফলে সেখানে কাষ্টমার আমাদের এই এ্যাপ থেকে কী আশা করছে আমরা বুঝতে পারি না। এখানে আমাদের জানার আছে অনেককিছু। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিদ্ধান্তের প্রভাব অনেক বেশি হয়।” কেটি ডিল বিশ্বাস করেন, মানুষের হাত ধরে প্রযুক্তি জগতে দ্রুত পরিবর্তন আসছে এটি মানুষের ক্ষমতার একটি সুন্দর প্রতিচ্ছবি।

আরলান হ্যামিলটনঃ

আরলান হ্যামিলটনের কোম্পানি ব্যাকস্টেজ ক্যাপিটাল কাজ করে নতুন উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হ্যামিলটন মনে করেন যে কেউ তার উপযুক্ত আইডিয়া নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। হোক সে মেয়ে বা সমকামী অথবা কৃষ্ণাঙ্গ।

২০১৫ সালে ব্যাকস্টেজ ক্যাপিটাল তার যাত্রা শুরু। সেসময় হ্যামিলটন খেয়াল করেন যে স্টার্টআপ জগত একটি নির্দিষ্ট নিয়মের ভিতর আটকে আছে। এখানে পুরুষ এবং শ্বেতাঙ্গদের একচ্ছত্র অধিকার। ফলে মহিলা এবং কৃষ্ণাঙ্গদের স্টার্টআপ কোম্পানির জন্য বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে চায় না। ব্যাকস্টেজ ক্যাপিটাল কোম্পানি সেইসব উদ্যোক্তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে।

হ্যামিলটন বিজনেস ইনসাইডারকে দেয়া তার সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রচলিত নিয়মের বাইরে বের হয়ে সেইসব পিছিয়ে পরা তুখোড় উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দেয়াই তার কোম্পানির লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণে ২০১৫ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত ১০০ কোম্পানির জন্য ব্যাকষ্টেজ বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার। আগামী দুই এক বছরের মধ্যে ৩৬ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড করার স্বপ্ন দেখেন হ্যামিলটন। যেই ফান্ডের টাকা তিনি ব্যয় করবেন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা উদ্দ্যোক্তাদের জন্য।

এইবছরের মার্চ থেকে তিনি প্রধান নির্বাহি কমকর্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যাকস্টেজের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। আরলান হ্যামিলটন মনে করেন প্রযুক্তি জগতে যত বেশি লোক যুক্ত হবে, একটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি জগতের সম্ভাবনা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।

ট্রিষ্টান হ্যারিসঃ

সেন্টার ফর হিউম্যানি টেকনোলজির পরিচালক এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা ট্রিষ্টান হ্যারিস কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জীবনের টেকনোলজির ক্ষতিকর প্রভাব কম করার মিশন নিয়ে। প্রযুক্তিতে তিনি এনেছেন বিপ্লব। একজন স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট হিসেবে তিনি ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে কাজ করেছেন গুগল এবং অ্যাপলের মত প্রতিষ্ঠানে। ২০১৩ সালে গুগলে কাজ করার সময় তিনি বুঝতে পারলেন টেকনোলজি তার আসল পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। নতুন নতুন ক্রিয়েটিভ জিনিস তৈরি করা বিরত থেকে ইউজারদের আগ্রহকে তারা তাদের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছে। হ্যারিস তখন মনে করলেন নতুন কিছু করতে হলে তিনি ছাড়া কেউই এগিয়ে আসবে না।

এই অনুপ্রেরণা থেকে তিনি ১৪১টি স্লাইডের একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করেন। সেখানে টেক কোম্পানিগুলো কিভাবে ইউজারদের আগ্রহ নিয়ে খেলছে সে বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন এবং এমন বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য গুগলকে আহ্বান জানান।

২০১৫ সালে তিনি গুগল থেকে পদত্যাগ করেন এবং তার বন্ধু জেমস উইলিয়ামকে সাথে নিয়ে সেন্টার ফর হিউম্যানি টেকনোলজির কাজ শুরু করেন। টেকনোলজিকার ডিজাইন এথিকস-এর প্রচার তারা শুরু করেন। তার চেষ্টার ফসল হিসেবে প্রযুক্তির জায়ান্ট খ্যাত কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বাড়তে থাকে। ফলে গতবছর থেকে অ্যাপল, গুগল , ফেসবুকের মত কোম্পানিগুলো তাদের ডিভাইস এবং সার্ভিস দ্বারা যেসব বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল সেসব দূরীকরণের জন্য নতুন ফিচার যুক্ত করে। যদি এখনো হ্যারিস একে “বেবি স্টেপ” হিসেবেই আখ্যায়িত করেন।

লিসা জ্যাকসনঃ

অ্যাপলের পরিবেশ, নীতি এবং সামাজিক উদ্যোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিসা জ্যাকসন দুনিয়াকে দেখিয়েছেন পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং কর্পোরেট জগতে সফলতাই জেতার মূলমন্ত্র। অ্যাপল সবসময় আমাদের দুর্দান্ত সব প্রোডাক্ট যেমনঃ আইফোন, ম্যাক ইত্যাদি উপহার দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের বলা যায় পারফেক্টশনিষ্ট। কিন্তু ২০১৩ সালে লিসা অ্যাপলে যোগদানের পর অ্যাপলের জন্য সফলতার সংজ্ঞা দেন অন্যভাবে। তিনি মনে করেন নতুন নতুন প্রোডাক্ট তৈরির জন্য বারবার বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। ক্রেতার কাছে আইফোন কেনার সময় সেটিকে মসৃণ এবং চকচকে একটি ফোন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। কিন্তু, এটি তৈরিতে দরকার হয় এ্যালুমিনিয়াম, কোবাল্ট, স্বর্ণের মত খনিজ পদার্থের।

লিসা জ্যাকসনের অদম্য চেষ্টায় অ্যাপল এদিকে বেশ খানিকটা এগিয়েছে। বর্তমানে অ্যাপল তাদের আইফোনের মেইন লজিক বোর্ড তৈরির জন্য রিসাইকেল টিন ব্যবহার করছে। ফলে বছরে ১০,০০০ টন টিনের আকরিক খনন করার দরকার হচ্ছে না। এছাড়াও আইফোন এক্সএসের স্পীকারের ঘের তৈরির জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩৫% রিসাইকেল প্লাষ্টিক।

লিসা জ্যাকসন এ সম্পর্কে বলেন, “যখন আমরা পুনঃব্যবহার্য পদার্থ ব্যবহার করে আমাদের প্রোডাক্টগুলো তৈরি করতে চাইলাম তখন অধিকাংশ লোক বলেছিলো এটা অসম্ভব। কিন্তু অ্যাপল সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসে। এক্ষেত্রে বরাবরই আমরা সফল।”

হ্যাউই লিও, অ্যান্ড্রু অফষ্ট্যাড, ইমিট নিকোলাসঃ

Howie Liu, Andrew Ofstad, and Emmett Nicholas, the founders of Airtable, want to let anyone build an app, even if they can't code


লিও,অ্যান্ড্রু এবং নিকোলাস তিনবন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন এয়ারটেবিল, যেখানে কোডিং এর ‘ক’-ও না জানা মানুষ নিমিষেই একটি অ্যাপ তৈরি করে ফেলতে পারবে। জিনিয়াস এই তিন বন্ধুর দেখা হয় ডিউক ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে যখন তাদের বন্ধুরা আড্ডাবাজি করতো, ঘুরে বেড়াতো তখন তারা তিন বন্ধু নিত্যনতুন টেকনোলজির স্টার্টআপ আইডিয়া নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতো। কিন্তু সিলিকন ভ্যালিতে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছিলো।

২০১৫ সালে তাদের কোম্পানি এয়ারটেবিল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বেশ সাধারণের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়। কারণ এয়ারটেবিল তৈরির পেছনের চিন্তা ছিল এমনসব অ্যাপ তৈরি করা যা সহজ এবং দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে, যেগুলোর পিছনের লজিক চিন্তা করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এয়ারটেবিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাউই লিও বলেন, “গতানুগতিকভাবে সফটওয়্যার তৈরির ধারণা থেকে আমরা বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছি। শুধুমাত্র কোডিং করেই সফটওয়্যার তৈরি করা যায় এই ধারণা আমরা পাল্টে দিতে চেয়েছি।”

বর্তমানে এয়ারটেবিল ৮০,০০০ কাষ্টমারকে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানির উৎপাদন পরিকল্পনা পর্যন্ত।

টনি রেইডঃ


অ্যামাজনের ভার্চুয়াল সহকারী এ্যালেক্সা এবং অন্যান্য ইকো ডিভাইস সেবার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন টনি রেইড। তিনি অ্যামাজনের শুরুর দিকের ৬০০ জন কর্মীর একজন। ১৯৯৮ সালে টনি যখন অ্যামাজনের যোগদান করেন তখন অ্যামাজন ছিল অনেক ছোট্ট একটি অনলাইন বইয়ের দোকান যার ছিল ভবিষ্যতে বিশাল কিছু হবার উচ্চাশা।

অ্যামাজনের কাজ করার সুবাদে রেইডের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে অনেকগুলো পালক। তার নেতৃতে কোম্পানি ভয়েস কন্ট্রোল কম্পিউটিং-এ সাফল্য পেয়েছে। ভয়েস কন্ট্রোল কম্পিউটিং-এর ধারণা কম্পিউটার জগতে প্রায় নতুন। এই প্রযুক্তির সাহায্যে যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি, যন্ত্রকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে আরো নিবিড়ভাবে যুক্ত করা যায়। গুগল এবং অ্যাপল অনেক আগে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও, অ্যামাজনকে এক্ষেত্রে প্রায় নবীনই বলা যায়। টনি রেইডের হাত ধরে যা এগিয়ে যাচ্ছে গুটি গুটি পায়ে।

মাশায়োশি সানঃ

সফটব্যাংক-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যান মাশায়োশি সান বর্তমানে সিলিকন ভ্যালির অন্যতম তারকা, যার কোম্পানির কোষাগারে জমা আছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। সিলিকন ভ্যালিতে “মাশা” নামে পরিচিত মাশায়োশি সান সফটব্যাংক নামক জাপানী টেকনোলজি হোল্ডিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার নেতৃতে গঠিত হয়েছে সফটব্যাংকের “ভিশন ফান্ড”। যে ফান্ডের অর্থ টেকনোজির উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

সফটব্যাংক মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ই-কমার্স, সেমিকন্ডাকটর এই ধরণের খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো এই আর্থিক সহায়তার কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে এবং উন্নতমানের সুযোগ সুবিধা দিয়ে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। সফটব্যাংকের ভিশন ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৌদি আরবের পাবলিক ফান্ড একটি। এর ফলে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার পর এই কোম্পানি অন্যান্য টেক স্টার্টআপ দ্বারা বেশ সমালোচনার মুখে পরে। কিন্তু সেই সমালোচনা প্রযুক্তি জগতে মাশার প্রভাব খর্ব করতে পারেনি। ভিশন ফান্ডের প্রভাব এত ব্যাপক যে, অনেকে মনে করেন কোন ষ্টার্টআপ প্রযুক্তি জগতে টিকে থাকবে সেটি ঠিক করে দেয় মাশা-র সফটব্যাংক।

সফটব্যাংকের প্রধান বাজির জায়গা এখন বিখ্যাত রাইডে শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবার। এছাড়াও সম্প্রতি উইওয়ার্কে সফটব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ১০.৫ বিলিয়ন ডলার। জাপানের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী মাশায়োশি সান, যার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

টিম সুয়েনীঃ


এপিক গেমের প্রধান নির্বাহী টিম সুয়েনী গেম ইন্ডাষ্ট্রিকে নিয়ে গেছেন অন্যন্য এক উচ্চতায়। বর্তমান গেমিং ইন্ডাষ্ট্রির একমাত্র অবলম্বন বলা হয় টিম সুয়েনীকে। গত তিন দশক ধরে তিন এই কোম্পানিকে একটি ছোট্ট দোকান থেকে আজকের অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। যদিও ফোর্টনাইটের সাফল্যের পরে বুঝা গেল যে, তিনি গেমিং ইন্ডাষ্ট্রিতে একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আসেননি, তিনি এসেছেন নতুন করে প্রযুক্তি জগতে গেমকে জনপ্রিয় করতে।

ফোর্টনাইট গেমকে অনেকেই একটি “বিস্ময়” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই গেমটি গেমারকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বেশ কয়েক ঘন্টা সময় আটকে রাখে যেখানে গেমার অপরিচিত মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এছাড়াও লাইভ কনসার্ট দেখতে পারে। সর্বোপরি এটি একটি ব্যবসা যেখান থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করা হয়।ইতিমধ্যেই ফোর্টনাইট গেমটি নতুন প্রজন্মের গেমারদের দারুন সব অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতে সক্ষম হয়েছে।

ফোর্টনাইট বলতে গেলে প্রায় বিন্দু থেকে সিন্ধুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই গেমের রয়েছে ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী। সুয়েনীর এপিক গেম কোম্পানি এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীদের সাহায্যের জন্য তৈরি করেছেন এপিক গেম ষ্টোর। যেটি পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে স্বনামধন্য গেমিং ষ্টোর এ্যাপল ষ্টোর এবং গুগল প্লে ষ্টোরের সাথে।

তাল তামিরঃ

তাল তামির কাজ করছেন ব্যাটারি ফ্রি চিপ নিয়ে, যেখানে শক্তির উৎস হবে রেডিও সিগন্যাল। এই উদ্দেশ্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন “উইলিউট”, যেখানে বর্তমানে তিনি প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন আমরা “শক্তি সমুদ্র বা Sea of Energy”- তে বাস করি। সেটি ব্যবহার করার জন্য দরকার কোন মানুষ বা কোন ডিভাইস।

স্টার্টআপ কোম্পানি উইলিওট এমন সব চিপ তৈরি করে থাকে যেগুলোর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করবে রেডিও সিগন্যাল।উইলিওটের তৈরি ব্লুটুথ কানেক্টেড ইলেকট্রনিক স্টিকার তেমন একটি প্রোডাক্ট। যেমনঃ যদি কোন পোষাকের গায়ে এমন একটি ইলেকট্রনিক স্টিকার থাকে, তাহলে সেটিতে সংরক্ষিত থাকবে বেশ কিছু ডাটা। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওয়াশিং মেশিন সেই পোশাকটি ধৌত করার জন্য সেটিং ঠিকঠাক করে নেবে।

মাত্র দুইবছর আগে যাত্রা শুরু করে উইলিওট। তাদের বর্তমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাল তামির বলতেই পারেন, তারা যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটি পূরণ হওয়া সম্ভব। তামির বলেন, “যখন আমরা ব্যাটারি ফ্রি চিপ নিয়ে কাজ করা শুরু করি, তখন আমরা বুঝতে পারি শক্তিসমুদ্রের শক্তি নিয়ে কাজ করা কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়। সেই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছি আমরা।”

লেখক – তামান্না নিশাত রিনি।









Leave a Reply